কেন ক্যান্সার প্রতিরোধে জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ?

কেন ক্যান্সার প্রতিরোধে জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ?

কেন ক্যান্সার প্রতিরোধে জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ?  

ক্যান্সার হলো এমন একটি জটিল রোগ, যা শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিস্তার কারণে ঘটে থাকে। এই রোগের পূর্ণ নিরাময় এখনও অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, তবে গবেষণা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রের অগ্রগতির মাধ্যমে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে জীবনধারা, অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস এবং খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেসব অভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, সেগুলির মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে আসে।

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি পুষ্টিকর, সুষম ও ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বেশি পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া শরীরকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী করে তোলে।

২. শারীরিক ব্যায়াম

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেয় না, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।

৩. মানসিক চাপ কমানো

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হতে পারে, যার মধ্যে ক্যান্সারও একটি। স্ট্রেস শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, যা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই মানসিক শান্তি বজায় রাখা, ধ্যান বা মেডিটেশন করা, সময়-সুযোগে বিশ্রাম নেওয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৪. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা

ধূমপান ও মদ্যপান ক্যান্সারের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। ধূমপান শরীরের কোষে অত্যধিক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ প্রবাহিত করে, যা ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে ফুসফুস ক্যান্সার, মুখগহ্বর ক্যান্সার, গলা ক্যান্সার ইত্যাদি ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে। তেমনি মদ্যপানও শরীরে অ্যালকোহলিক পদার্থের উপস্থিতি সৃষ্টি করে, যা লিভার ক্যান্সার এবং অন্যান্য শরীরের অঙ্গের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

অতিরিক্ত ওজন বা মেদ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে, যারা স্থূলকায় বা অতিরিক্ত ওজনের শিকার, তাদের ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি যেমন স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ডিম্বাশয় ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার বেশি হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সময়মতো সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরের অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা লক্ষণ শনাক্ত করা যেতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যেমন স্তন ক্যান্সারের জন্য মামোগ্রাম, মলদ্বারের ক্যান্সারের জন্য কোলনোস্কোপি ইত্যাদি ক্যান্সারের অতি প্রাথমিক স্তরে সনাক্ত করতে সহায়ক।

উপসংহার

ক্যান্সার প্রতিরোধে জীবনধারার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এই সমস্ত অভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কেবলমাত্র চিকিৎসার মাধ্যমে নয়, বরং জীবনধারার মাধ্যমে আমরা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। তাই আমাদের উচিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা এবং এই পরিবর্তনগুলি কার্যকরভাবে পালন করা।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩