জুমার দিনের করণীয়

 জুমার দিনের করণীয়

জুমার দিনের করণীয়


জুমা (শুক্রবার) ইসলামিক বরকতময় একটি দিন, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি একটি সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন মুসলিমরা আল্লাহর কাছে একত্রিত হয় এবং প্রার্থনা ও ইবাদতে রত থাকে। প্রতিটি মুসলিমের জন্য এই দিনটি কিছু বিশেষ করণীয়ের মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত।

১. জুমার সালাত (শুক্রবারের নামাজ)

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো জুমার সালাত। এটি ফরজ নামাজ, যা মুসলিমরা সাপ্তাহিক জামাতে পড়ে। জুমার সালাতের আগে মুসলিমরা খুতবা শোনেন, যা ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন: "হে বিশ্বাসীরা! যখন কোনো দিন আল্লাহর নামের জন্য (জুমার) সালাতের আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে মনোনিবেশ করো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানো।" (সুরা: আল-জুমুআ, আয়াত: 9)

২. জুমার দিনের সুন্নাত নামাজ

জুমা নামাজের আগে ও পরে সুন্নাত নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুমা সালাতের আগে দুই রাকআত সুন্নাত নামাজ এবং পরে ৪ রাকআত সুন্নাত নামাজ পড়া রয়েছে। এভাবে, আল্লাহর কাছে অধিক নৈকট্য অর্জিত হয়।

৩. যিকির ও দোয়া

জুমার দিনটি আল্লাহর যিকির এবং দোয়া করার একটি বিশেষ দিন। যিকির এবং দোয়া দ্বারা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ লাভের সুযোগ আরও বেশি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "জুমার দিন এক ঘণ্টা আছে, যখন একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, আল্লাহ তাকে নিশ্চয়ই দেন।" (বুখারি)

তবে, বিশেষত আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয়ে দোয়া করা উচিত এবং নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, এবং পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্ষমা ও বরকত প্রার্থনা করা উচিত।

৪. দান-খয়রাত করা

জুমার দিনে দান ও খয়রাতের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। ইসলামে গরিবদের সাহায্য করা, দরিদ্রদের মাঝে দান-খয়রাত করা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। এটি পাপ মোচন করে এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও নৈতিক দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

৫. সুরা আল-কাহফ পাঠ

জুমার দিনে সুরা আল-কাহফ পাঠ করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি শুক্রবারে সুরা আল-কাহফ পড়বে, তার জন্য সপ্তাহব্যাপী আল্লাহর রহমত থাকবে।" (আল-জামে)

সুরা আল-কাহফের পাঠের মাধ্যমে, মুসলিমরা শয়তান ও অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে রক্ষা পায় এবং আল্লাহর হেদায়াত লাভ করে।

৬. গোসল করা

জুমার দিন গোসল করা সুন্নাত। এটা শরীরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি, নামাজে মনোযোগী হওয়ার জন্যও উপকারী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি জুমা দিন গোসল করবে, তা তার জন্য একটি পূর্ণতা হবে।" (বুখারি)

৭. অতিরিক্ত নামাজ এবং দোয়া

জুমা দিনে অতিরিক্ত নামাজ পড়া এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা খুবই উপকারী। বিশেষত, জুমার দিন একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত দোয়া কবুল করেন। তাই এই সময়টি খুঁজে বের করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

৮. ভালো কাজ করা এবং সৎ আচরণ

জুমার দিনে ভালো কাজ করা এবং সৎ আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা বলা, অপব্যবহার, খারাপ আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত। ইসলামে ভালো আচরণের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে এবং এটি জুমার দিনেও অনুসরণ করা উচিত।

উপসংহার

জুমার দিনটি মুসলিমদের জন্য ঈমান ও দেহের পুনর্জীবন লাভের একটি সানন্দ দিন। আল্লাহর ইবাদত, দোয়া, সুন্নাত নামাজ, সুরা আল-কাহফ পাঠ, গোসল, দান-খয়রাত, এবং সৎ আচরণের মাধ্যমে এই দিনটি অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। আমাদের উচিত, এই বিশেষ দিনটির পূর্ণ ব্যবহার করা এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের জন্য চেষ্টা করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩