যাকাত প্রদান: ফরজ বিধান ও হিসাব
যাকাত প্রদান: ফরজ বিধান ও হিসাব
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি সম্পদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার একটি পদ্ধতি। মুসলিমরা প্রতি বছর তাদের অতিরিক্ত সম্পদের একটি অংশ দান করে যাকাত প্রদান করেন, যা দরিদ্রদের সাহায্য এবং সমাজে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কাজ করে।
যাকাতের ফরজ বিধান
যাকাত ফরজ হওয়া এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু শর্ত রয়েছে:
-
নেসাব: যাকাত প্রদান করার জন্য আপনির কাছে যে সম্পদ রয়েছে, তা নেসাবের পরিমাণে পৌঁছাতে হবে। নেসাবের পরিমাণ হলো ৭.৫ সা' (প্রায় ৫৮২.৩ গ্রাম সোনা) অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ বা সম্পদ।
-
মালিকানা: যাকাত দেয়ার জন্য সম্পদটি সম্পূর্ণ আপনার মালিকানাধীন হতে হবে এবং আপনি এটি এক বছর ধরে রাখেন।
-
অন্তত এক বছর থাকার শর্ত: যাকাত পরিশোধের সময়, সম্পদটি কমপক্ষে এক বছর ধরে আপনার কাছে থাকতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সম্পদ যদি কমে যায়, তবে তা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে।
যাকাতের হিসাব
যাকাতের পরিমাণ সাধারণত আপনার মোট মালিকানাধীন সম্পদের ২.৫%। তবে যাকাত দেয়ার জন্য শুধুমাত্র সোনা, রূপা, নগদ টাকা বা অন্য কোন সম্পদ যা আপনার এক বছরের প্রয়োজনের বাইরে আছে, সে সমস্ত সম্পদ হিসাব করা হয়। এছাড়া ব্যবসার মালিকানাধীন যে সম্পদ রয়েছে, তা থেকেও যাকাত প্রদান করতে হয়।
হিসাবের পদ্ধতি:
- সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করুন (ধন-সম্পদ, জমি, সোনা, রূপা ইত্যাদি)।
- আপনার নেসাবের পরিমাণ মেটানোর পর ২.৫% পরিমাণ যাকাত হিসাব করুন।
- যাকাতের হিসাব শেষে, তা নির্দিষ্ট খাত বা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করুন।
যাকাতের গুরুত্ব
যাকাত শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি সমাজের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার একটি কার্যকর উপায়। এটি ধনীদের জন্য বিনয়ী হওয়ার সুযোগ এবং দরিদ্রদের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে। ইসলামে বলা হয়েছে, যাকাত মুমিনদের জন্য একটি ধার্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যম এবং সমাজে বৈষম্য কমানোর এক উপায়।
উপসংহার
যাকাত ফরজ বিধান হিসেবে মুসলিমদের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু আর্থিক সাহায্যই দেয় না, বরং মানবিক মূল্যবোধও প্রতিষ্ঠা করে। যাকাত প্রদান করে সমাজে একতা, সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো সম্ভব।