রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোন কোন রোগ নির্ণয় করা যায়?
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোন কোন রোগ নির্ণয় করা যায়?
![]() |
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোন কোন রোগ নির্ণয় করা যায়? |
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। রক্তের বিভিন্ন উপাদান ও সূচকের মাধ্যমে শারীরিক অবস্থা, রোগের ধরন এবং তার প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষা মূলত শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন ও অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নিচে বিভিন্ন রোগের তালিকা দেয়া হলো যা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয়যোগ্য রোগসমূহ:
-
আনিমিয়া (Anemia):
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে, এটি আনিমিয়ার লক্ষণ হতে পারে। সাধারণ রক্ত পরীক্ষা (Complete Blood Count বা CBC) মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ও রক্তের সেলের অবস্থা নির্ণয় করা যায়।
-
ডায়াবেটিস (Diabetes):
- রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হয়। ফাস্টিং ব্লাড গ্লুকোজ (FBG) এবং হিমোগ্লোবিন A1c (HbA1c) পরীক্ষা দিয়ে ডায়াবেটিসের অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব।
-
থাইরয়েড সমস্যা (Thyroid Disorders):
- থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা (TSH, T3, T4) করে থাইরয়েডের অস্বাভাবিকতা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম নির্ণয় করা যায়।
-
লিভার ডিজিজ (Liver Disease):
- লিভারের কার্যক্রম পরীক্ষা করতে লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT) করা হয়। এই পরীক্ষায় লিভারের এনজাইমস, বিলিরুবিন, প্রোটিন লেভেল ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়।
-
কিডনি সমস্যা (Kidney Disorders):
- কিডনির কার্যক্রম নিরীক্ষণের জন্য ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া এবং GFR (Glomerular Filtration Rate) পরীক্ষা করা হয়। এগুলোর মাধ্যমে কিডনি ফেইলিউর বা অন্যান্য সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
-
হৃদরোগ (Heart Diseases):
- রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল পরীক্ষা করে হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ণয় করা যায়। এছাড়া, বিশেষ কিছু এনজাইম (যেমন CK-MB, Troponin) পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাকের অবস্থা যাচাই করা যায়।
-
অটোইমিউন ডিজিজ (Autoimmune Diseases):
- সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমেটোসাস (SLE), রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) এবং অন্যান্য অটোইমিউন রোগ নির্ণয় করার জন্য রক্তের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়।
-
ইনফেকশন (Infections):
- রক্ত পরীক্ষা করে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়। যেমন, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস, HIV ইত্যাদির জন্য বিশেষ পরীক্ষা করা হয়।
-
ক্যান্সার (Cancer):
- কিছু বিশেষ ক্যান্সারের জন্য রক্ত পরীক্ষা যেমন PSA (Prostate Specific Antigen), CEA (Carcinoembryonic Antigen), CA 125 ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা সম্ভব।
-
হিমোফিলিয়া (Hemophilia):
- রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা বা হিমোফিলিয়া নির্ণয়ের জন্য রক্তের কো-অ্যাগুলেশন টেস্ট (যেমন, PT, APTT) করা হয়।
- গৌট (Gout):
- রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ পরীক্ষা করে গৌট নির্ণয় করা যায়।
- হেপাটাইটিস (Hepatitis):
- হেপাটাইটিস B, C এবং D এর জন্য বিশেষ হেপাটাইটিস মার্কার টেস্ট করা হয়, যা রোগের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সহায়ক।
- শরীরের অতিরিক্ত লবণ ও পটাশিয়ামের পরিমাণ (Electrolyte Imbalance):
- শরীরে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ক্লোরাইডের পরিমাণ নিরীক্ষণ করে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা (যেমন, ডিহাইড্রেশন, কিডনি সমস্যা) শনাক্ত করা যায়।
- হরমোনাল ডিসঅর্ডার (Hormonal Disorders):
- বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করে হরমোনের অস্বাভাবিকতা যেমন পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), অ্যাডিনাল ডিসফাংশন ইত্যাদি নির্ণয় করা সম্ভব।
সারাংশ:
রক্ত পরীক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি যা শারীরিক অবস্থা, রোগের ধরন এবং তার প্রকৃতি নির্ণয়ে সহায়তা করে। এটি চিকিৎসকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ, যার মাধ্যমে রোগের সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা সম্ভব।