ইফতারের ফজিলত ও সুন্নত আমল
ইফতারের ফজিলত ও সুন্নত আমল
রমজান মাস, যা ইসলামের অন্যতম শ্রদ্ধেয় এবং বরকতময় মাস, এই মাসে সারা বিশ্বের মুসলিমরা সিয়াম পালন করেন, অর্থাৎ সারা দিন রোজা রাখেন। রোজা ভাঙার সময়, বা "ইফতার", মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি শুধু খাদ্য গ্রহণের সময় নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় মুহূর্তও। ইফতারের সময় বিশেষ কিছু আমল এবং ফজিলত রয়েছে, যা আমাদের জীবনকে আরও বরকতময় এবং আল্লাহর নিকট প্রিয় করে তোলে।
ইফতারের ফজিলত
ইফতার করার সময় বিশেষ কিছু ফজিলত রয়েছে, যা আমাদের সৎ আমলগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে।
-
দোয়া কবুল হওয়ার সময়: ইফতার করার সময় মুসলিমদের জন্য বিশেষ একটি দোয়া রয়েছে। এই সময় আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেন। সঠিক নিয়ত সহকারে ইফতার করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছ থেকে বহু বরকত লাভ করা সম্ভব।
-
গুনাহ মাফ হওয়ার সুযোগ: যারা সিয়াম পালন করেন, তাদের গুনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহ তাআলা ইফতার ও রোজার মাধ্যমে সুযোগ দেন। এই মাসে তাওবা করে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা অনেক সহজ এবং এর মাধ্যমে পূর্ণ মুক্তি লাভ সম্ভব।
-
দয়া ও করুণা: ইফতারি বা খাবারের সাহায্যে দরিদ্রদের সহযোগিতা করা একটি মহান আমল। যারা দান করেন, তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। এটি মুসলিম সমাজে একে অপরকে সহায়তা করার, দয়া প্রদর্শন করার এবং মিল-মিশন তৈরির এক উপযুক্ত সময়।
সুন্নত আমল
ইফতার করার সময় কিছু সুন্নত আমল রয়েছে, যা মহান নবী (সা.) এর হাদিসের মাধ্যমে জানা গেছে।
-
খেজুর দিয়ে ইফতার করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি খেজুর দিয়ে ইফতার করে, তার রোজা পূর্ণ হয়।" তাই খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত হিসেবে পরিচিত। খেজুরে রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা, যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
-
পানি দিয়ে ইফতার করা: খেজুর না পাওয়া গেলে, পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। রাসূল (সা.) পানির মাধ্যমে ইফতার করতেন, যা শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখে এবং রোজার পর শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
-
দোয়া ও ইস্তিগফার: ইফতার করার আগে কিছু বিশেষ দোয়া পাঠ করা উচিত। এই দোয়াগুলি করলে আল্লাহ তাআলা আমাদের গুনাহ মাফ করেন এবং বরকত দেন। ইস্তিগফার করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এই সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল।
-
বিশেষ দোয়া: ইফতার করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়া সুন্নত:
"اللهم إني لك صمت وبك آمنت وعليك توكلت وعلى رزقك أفطرت"
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোর জন্য সিয়াম পালন করেছি, তোর ওপর বিশ্বাস রেখেছি, তোর ওপর ভরসা করেছি এবং তোর দান দ্বারা ইফতার করেছি।)
উপসংহার
ইফতার শুধুমাত্র খাদ্য গ্রহণের সময় নয়, বরং একটি মহৎ ও বরকতপূর্ণ মুহূর্ত, যা মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ ধর্মীয় অভিজ্ঞতা। সুন্নত আমলগুলো পালন করে আমরা ইফতারের মুহূর্তকে আরও বরকতময় করে তুলতে পারি এবং আল্লাহর নিকট বেশি করে নৈকট্য লাভ করতে পারি।
এতএব, আমাদের উচিত ইফতার করার সময় সুন্নত অনুযায়ী আমল করা, দোয়া করা এবং আল্লাহর দিকে নিবেদিত মন নিয়ে তাকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার সিয়াম ও ইফতার কবুল করুন। আমিন।