হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ও প্রতিরোধ
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ও প্রতিরোধ:
![]() |
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ও প্রতিরোধ |
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (Myocardial Infarction), যা সাধারণত “ব্রেস্ট পেইন” বা বুকের ব্যথা হিসেবে পরিচিত, তা ঘটে যখন হার্টের কোনও একটি ধমনী (coronary artery) বন্ধ হয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে, হার্টের মাংসপেশীতে অক্সিজেনের অভাব হয়, যা হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ:
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে আলাদা হতে পারে। তবে, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়:
-
বুকের ব্যথা বা চাপ অনুভব করা:
বুকের মাঝখানে একটানা চাপ বা সিম্পটম অনুভব হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং এটি একপাশে বা শরীরের অন্যান্য অংশে (যেমন হাত, পিঠ, বা জিভে) ছড়িয়ে পড়তে পারে। -
শ্বাসকষ্ট:
বুকের ব্যথার সাথে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া সাধারণ লক্ষণ। কেউ কেউ হালকা শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন, আবার কেউ আবার পুরোপুরি শ্বাস নিতে অক্ষম হতে পারেন। -
ঘাম হওয়া:
হার্ট অ্যাটাকের সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া সাধারণ একটি লক্ষণ। বিশেষ করে রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। -
মাথা ঘোরা বা বমি আসা:
অনেক মানুষ হার্ট অ্যাটাকের সময় মাথা ঘোরা বা বমি আসার অনুভূতি পায়। এটি শরীরের অতিরিক্ত চাপ এবং অক্সিজেনের অভাবের কারণে হতে পারে। -
অজ্ঞান বা অস্থির হওয়া:
কখনও কখনও হার্ট অ্যাটাকের কারণে ব্যক্তির অস্থিরতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া হতে পারে। -
অস্বাভাবিক ক্লান্তি:
আপনি যখন বিশেষ কিছু না করেন তবুও যদি অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে এটি হার্ট অ্যাটাকের একটি পূর্বাভাস হতে পারে। -
পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি:
কিছু ক্ষেত্রে, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে, যা বুকের ব্যথা অথবা শ্বাসকষ্টের সাথে সংযুক্ত হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের কারণসমূহ:
১. ধূমপান:
ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের জন্য অন্যতম প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ কারণ, কারণ এটি রক্তনালীগুলির সঙ্কোচন ঘটায়।
২. অতিরিক্ত মেদ ও ভোজন:
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়া এবং কম শারীরিক কার্যকলাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. আরও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা:
উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, এবং মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়:
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় রয়েছে। সেগুলি নিম্নরূপ:
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
চর্বিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, এবং সোডিয়াম গ্রহণ কমাতে হবে। ফলমূল, শাকসবজি, এবং সঠিক পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার খাওয়া উচিত। এছাড়া, ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস হতে হবে স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক। -
ধূমপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। -
শারীরিক ব্যায়াম:
সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ করা উচিত। হাঁটাহাঁটি, সাঁতার কাটা, বা সাইকেল চালানো প্রভৃতি সঙ্গতিপূর্ণ ব্যায়াম হতে পারে। -
ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত ওজন বা মেদ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সঠিক ওজন বজায় রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও ব্যায়াম এর জন্য সহায়ক। -
মানসিক চাপ কমানো:
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই নিয়মিত মেডিটেশন, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম বা প্রাকৃতিক উপায়ে চাপ কমানো উচিত। -
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাকের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। -
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত শর্করার স্তর পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। -
কোলেস্টেরল কমানো:
উচ্চ কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ। খাবারে কম চর্বি ব্যবহার করে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
Conclusion:
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সুস্থ জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণগুলো চিনতে পারলে ও দ্রুত চিকিৎসা নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।