জুমার দিনের মেয়েদের আমল
জুমার দিনের মেয়েদের আমল
জুমার দিন মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে পুরুষরা জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান, তবে অনেক নারী মনে করেন যে, তাদের জন্য এই দিনের কোনো বিশেষ আমল নেই। কিন্তু আসলে জুমার দিন নারীদের জন্যও অনেক বরকত ও সওয়াবের সুযোগ রয়েছে।
এখানে আমরা জুমার দিনে মেয়েদের করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল তুলে ধরবো—
১. ফজরের নামাজের পর সূরা সাজদাহ ও সূরা দাহর তিলাওয়াত
রাসুলুল্লাহ ﷺ ফজরের নামাজে সূরা আস-সাজদাহ ও সূরা আদ-দাহর (সূরা আল-ইনসান) তিলাওয়াত করতেন (বুখারি, মুসলিম)। নারীরা চাইলে ঘরে বসে এই দুই সূরা পড়ে নিতে পারেন, এতে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যাবে।
২. গোসল ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
জুমার দিনে গোসল করা সুন্নাত। যদিও নারীদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ নয়, তবুও তারা চাইলে এই সুন্নত অনুসরণ করে ফজরের পরে বা জোহরের আগে গোসল করতে পারেন। এতে আত্মিক ও শারীরিক উভয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হবে।
৩. সুগন্ধি ও সুন্দর পোশাক পরা (শালীনতার মধ্যে)
জুমার দিনের অন্যতম সুন্নাত হলো সুন্দর পোশাক পরিধান করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা। যদিও নারীদের জন্য সুগন্ধি পরিধান করে বাইরে যাওয়া নিষেধ, তবে ঘরে পর্দার মধ্যে থাকলে হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং সুন্দর-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা উত্তম আমল।
৪. অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পাঠ
জুমার দিন নবীজির উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
"তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।"
📖 (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)
তাই নারীরা বাড়িতে বসে বা কাজের ফাঁকে বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়তে পারেন।
৫. সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা
জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াতের রয়েছে বিশেষ ফজিলত। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
"যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।"
📖 (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫০)
নারীরা চাইলে সম্পূর্ণ সূরা কাহফ পড়ে নিতে পারেন অথবা যদি সম্ভব না হয়, তবে অন্তত প্রথম ১০ আয়াত ও শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করলেও ফজিলত পাওয়া যাবে।
৬. বেশি বেশি দোয়া করা
জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে যখন কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন—
"জুমার দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলিম বান্দা নামাজে থাকাকালীন আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দিয়ে দেন।"
📖 (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫২)
তাই নারীরা দিনব্যাপী আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে পারেন, বিশেষ করে আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৭. নফল নামাজ ও ইবাদত করা
যেহেতু নারীদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ নয়, তাই তারা চাইলে জোহরের নামাজের আগে বা পরে অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। এতে ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং আল্লাহর কাছে অধিক নৈকট্য লাভ করা যাবে।
৮. পরিবারের জন্য ভালো খাবার তৈরি করা
জুমার দিনটি উৎসবের দিন হিসেবে গণ্য করা হয়, তাই এদিন পরিবারের জন্য হালাল ও ভালো খাবার তৈরি করা এবং সবাইকে খাওয়ানো একটি সুন্নাত আমল হতে পারে। এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয় এবং ঘরে একটি বরকতময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
৯. সাদকা ও দান-খয়রাত করা
জুমার দিন দান-সাদকা করার ফজিলত অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন—
"জুমার দিন অন্যান্য দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং এই দিনে দান-সদকা অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক মর্যাদাপূর্ণ।"
📖 (ইবনে খুজাইমা, সহিহ হাদিস)
যদি সামর্থ্য থাকে, তবে দরিদ্র আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বা যেকোনো গরিব মানুষকে সাহায্য করা যেতে পারে।
১০. তাওবা ও ইস্তিগফার করা
জুমার দিন আল্লাহ তাআলার রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এই দিনে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা, অতীতের গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নতুন করে জীবনকে আল্লাহর পথে গড়ে তোলার সংকল্প করা উচিত।
উপসংহার
জুমার দিন শুধু পুরুষদের জন্য নয়, বরং নারীদের জন্যও অনেক বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। যদিও নারীদের ওপর জুমার নামাজ ফরজ নয়, তবে তারা ঘরে থেকেই নানান আমলের মাধ্যমে জুমার দিনের বরকত ও সওয়াব অর্জন করতে পারেন। তাই আসুন, আমরা এই পবিত্র দিনে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে আরও বেশি মনোযোগী হই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করি।
📌 আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার দিনের ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন! 🤲