সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করার নিয়ম
সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করার নিয়ম: পূর্ণাঙ্গ গাইড
![]() |
সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করার নিয়ম |
দাঁত ব্রাশ করা প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি দাঁত ও মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং নানা ধরনের দাঁতের সমস্যা যেমন দাঁত পচা, মাড়ির রোগ, ব্যথা, এবং ব্রেড বা মন্দ গন্ধ থেকে মুক্ত রাখে। সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করার পদ্ধতি জানা এবং প্রতিদিন এটি অনুসরণ করা আপনার দীর্ঘমেয়াদী মুখস্বাস্থ্য রক্ষা করবে।
দাঁত ব্রাশ করার সঠিক পদ্ধতি:
১. ব্রাশের সঠিক নির্বাচন
সঠিক দাঁত ব্রাশের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দাঁতের আকার ও মাড়ির প্রয়োজন অনুযায়ী একটি মাঝারি বা নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। খুব শক্ত ব্রাশ গাম (মাড়ি) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং দাঁতও ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। দাঁত ব্রাশের bristles (ব্রিসলস) যেন সোজা থাকে এবং সেগুলি ধীরে ধীরে ঘষে ব্যবহার করা হয়।
২. সঠিক দাঁত ব্রাশের উপকরণ
দাঁত ব্রাশের সাথে একটি ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। ফ্লোরাইড দাঁতের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং দাঁতের ক্ষয় কমায়। অতিরিক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার না করা উচিত, কারণ এটি দাঁত ও মাড়ির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৩. ব্রাশ করার সময়
দাঁত ব্রাশ করার সময় প্রতিটি দাঁত কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য ব্রাশ করুন। ব্রাশিং সম্পূর্ণ করার জন্য সর্বোচ্চ ২ মিনিট সময় নিয়ে প্রতিটি অংশ ভালভাবে ব্রাশ করতে হবে।
৪. ব্রাশের সঠিক কোণ নির্বাচন
দাঁত ব্রাশ করার জন্য ব্রাশটিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে রেখে মাড়ি এবং দাঁত সংলগ্ন স্থানে ব্রাশ করুন। এটি দাঁতের কোণগুলো পরিষ্কার করবে এবং মাড়ির নিচে জমে থাকা খাবারের অংশ পরিষ্কার করবে।
৫. ব্রাশ করার সঠিক কৌশল
দাঁত ব্রাশ করার জন্য ছোট ছোট রোটেটিং (ঘূর্ণায়মান) আন্দোলন ব্যবহার করুন। দ্রুত গতিতে ব্রাশ না করে ধীরে ধীরে এবং মৃদু হাতের চাপ দিয়ে ব্রাশ করতে হবে। দাঁতের উপর কোন অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করে ব্রাশ করা উচিত, কারণ এটি দাঁত এবং মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৬. ফ্রন্ট, ব্যাক ও চিবানো অংশ
দাঁতের সামনে, পিছনে এবং চিবানো অংশে সমানভাবে ব্রাশ করুন। মাড়ি ও দাঁতের সংযোগস্থল (গাম-লাইন) বিশেষভাবে পরিষ্কার করুন, কারণ সেখানেই বেশি খাদ্য জমে থাকে। এছাড়া, দাঁত ব্রাশ করার পর দাঁতের পেছনের অংশগুলি দেখতেও ভুলবেন না, কারণ এখানে অনেক সময় খাবার জমে থাকে যা আপনি সহজে দেখতে পান না।
৭. ল্যাংগুয়েজ (জিভ) পরিষ্কার করা
দাঁত ব্রাশের পর আপনার জিভটিও পরিষ্কার করা উচিত। জিভে ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে এবং এটি মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যদি জিভ পরিষ্কার না করেন, তাহলে মুখের স্বাভাবিক গন্ধ বজায় রাখার জন্য এটি প্রয়োজন।
৮. মুখ ধোয়া
ব্রাশ করার পর মুখ ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। যদি ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করেন, তবে টুথপেস্ট খেয়ে না ফেলতে এবং মুখে কিছুক্ষণ রেখে দিতে ভুলবেন না, কারণ এটি দাঁতের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৯. মাউথওয়াশ ব্যবহার করা
দাঁত ব্রাশ করার পর মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন, যাতে মুখের মধ্যে জীবাণু কমে এবং দীর্ঘস্থায়ী ফ্রেশ অনুভূতি বজায় থাকে। তবে অতিরিক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে দাঁত বা মাড়ির স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই দৈনিক ব্যবহারে সীমাবদ্ধ রাখুন।
১০. ফ্লস ব্যবহার
দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের অংশ পরিষ্কার করার জন্য ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। ফ্লস আপনার দাঁতের মধ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং দাঁত ব্রাশিংয়ের পর এটি নিশ্চিত করে যে আপনার দাঁত পুরোপুরি পরিষ্কার।
দাঁত ব্রাশ করার সময়ে এড়াতে হবে এমন কিছু ভুল:
- অতিরিক্ত শক্তভাবে ব্রাশ করা: এটি দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করতে পারে।
- একটি নির্দিষ্ট স্থান এড়িয়ে যাওয়া: দাঁত ব্রাশ করার সময় পুরো মুখের বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
- অনেক বেশি টুথপেস্ট ব্যবহার করা: প্রয়োজনের অতিরিক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।
- খাবারের পর 바로 ব্রাশ করা: যদি আপনি আচার বা অম্লযুক্ত খাবার খান, তাহলে দাঁত ব্রাশ করার জন্য অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন, যাতে দাঁতের এনামেল নরম না হয়ে যায়।
কবে দাঁত ব্রাশ করবেন?
- সকালে উঠে এবং রাতে শোবার আগে দাঁত ব্রাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- খাবার খাওয়ার পরও দাঁত ব্রাশ করা যদি সম্ভব হয় তবে এটি আরও ভাল।
সমাপ্তি:
দাঁত ব্রাশের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা আপনার মুখগহ্বরের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এটির মাধ্যমে আপনি শুধু দাঁতের সঠিক পরিচর্যা করবেন না, বরং সার্বিক স্বাস্থ্যও ভাল রাখতে পারবেন।