রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত
রমাদানের গুরুত্ব ও ফজিলত
রমাদান মাস ইসলামের অন্যতম পবিত্র ও মহিমান্বিত মাস। এটি হিজরি বর্ষপঞ্জির নবম মাস, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মশুদ্ধি, সংযম ও তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এই মাসকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন এবং এর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বহু বর্ণনা রয়েছে।
রমাদানের গুরুত্ব
১. কুরআন অবতীর্ণের মাস: এই মাসে আল্লাহ তা'আলা মানবজাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ বলেন:
"রমাদান মাসই হল সে মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও ফুরকান।" (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
২. রোযা ফরজ করা হয়েছে: রমাদান মাসে সিয়াম বা রোযা পালন করা প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজ। আল্লাহ বলেন:
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।" (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
৩. গুনাহ মাফ ও জান্নাত লাভের সুযোগ: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমাদানে রোযা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।" (বুখারি ও মুসলিম)
রমাদানের ফজিলত
১. লাইলাতুল কদরের মহিমা: রমাদান মাসের শেষ দশ রাতের মধ্যে লাইলাতুল কদর রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ বলেন:
"লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।" (সূরা আল-কদর: ৩)
২. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়: রাসূল (সা.) বলেছেন:
"রমাদান মাস শুরু হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।" (বুখারি ও মুসলিম)
৩. দোয়া কবুল হওয়ার সময়: এই মাসে রোযাদারদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। রাসূল (সা.) বলেন:
"রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে: একটি ইফতারের সময় এবং অপরটি তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়।" (বুখারি ও মুসলিম)
রমাদানের করণীয়
১. সঠিক নিয়তে রোযা রাখা: শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোযা রাখা উচিত। ২. তারাবিহ নামাজ আদায় করা: এটি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ। ৩. কুরআন তিলাওয়াত করা: এ মাসে কুরআন পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। ৪. সদকা ও দান করা: দান-সদকা করলে সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ৫. তাকওয়া ও ধৈর্য ধারণ করা: রোযা মানুষের আত্মশুদ্ধি ও ধৈর্য শিক্ষা দেয়।
উপসংহার
রমাদান মাস মুসলমানদের জন্য অশেষ রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। এই মাসকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হলে আমাদের উচিত ইবাদতে মনোনিবেশ করা, গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমাদান মাসের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন, আমিন।