রমাদানের মাসে দোয়া কবুল হওয়ার সময়
রমাদানের মাসে দোয়া কবুল হওয়ার সময়
রমাদান হল ইবাদতের বসন্তকাল, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এই পবিত্র মাসে বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, রমাদানের কিছু বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
১. ইফতারের সময়
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া।" (তিরমিজি: ২৫২৫)
রমাদানে ইফতারের মুহূর্তটি আল্লাহর বিশেষ রহমতের সময়। তাই ইফতারের আগে ও পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত।
২. শেষ তৃতীয়াংশ রাত (তাহাজ্জুদের সময়)
হাদিসে বর্ণিত আছে, শেষ রাতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ডাক দেন:
"কে আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? কে আছো, যে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব?" (বুখারি: ১১৪৫, মুসলিম: ৭৫৮)
রমাদানের রাতে ইবাদতের ফজিলত অনেক বেশি, বিশেষ করে শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আন্তরিকভাবে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৩. লাইলাতুল কদর
লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম (সূরা কদর: ৩)। এই রাতে দোয়া কবুল হয়। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রাযি.) নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া করব? তিনি বললেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি।"
(অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।) (তিরমিজি: ৩৫১৩)
৪. জুমার দিন রমাদানে
জুমার দিন এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"জুমার দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে ভালো কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন।" (বুখারি: ৯৩৫, মুসলিম: ৮৫২)
রমাদানে জুমার দিনটি আরও বরকতময়, তাই এদিন বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
৫. সাহরির সময়
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"সাহরিতে বরকত রয়েছে, তাই সাহরি খাওয়া থেকে বিরত থেকো না।" (বুখারি: ১৯২৩, মুসলিম: ১০৯৫)
সাহরি একটি বরকতময় মুহূর্ত, যখন আল্লাহর রহমত নাজিল হয়। এই সময় দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
৬. ইতিকাফ অবস্থায় দোয়া
রমাদানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাত। যারা মসজিদে ইতিকাফ করেন, তারা অধিক ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন। এই সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
উপসংহার
রমাদান আল্লাহর রহমতের মাস। এই মাসে দোয়া কবুল হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ মুহূর্তগুলোতে মনোযোগ সহকারে দোয়া করা উচিত। আল্লাহ যেন আমাদের সকল দোয়া কবুল করেন এবং আমাদের রমাদানকে বরকতময় করেন, আমিন।