শুক্রবারের ফজিলত ও বরকত

 শুক্রবারের ফজিলত ও বরকত – হাদিস ও কুরআনের আলোকে

শুক্রবারের ফজিলত ও বরকত

ভূমিকা

ইসলামে শুক্রবার (জুমার দিন) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে এবং এতে রয়েছে বহু ফজিলত ও বিশেষ আমল। কুরআন ও হাদিসে শুক্রবারের গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।


শুক্রবারের ফজিলত কুরআনের আলোকে

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বিশেষভাবে শুক্রবারের দিনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন:

১. সূরা আল-জুমু’আহ

"হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে চলো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।"

(সূরা আল-জুমু'আহ: ৯)

এই আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের জন্য শুক্রবারের নামাজে যাওয়াকে ফরজ করেছেন এবং দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।


শুক্রবারের ফজিলত হাদিসের আলোকে

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস বলেছেন। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য হাদিস দেওয়া হলো:

  1. সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন

    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    "সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়, এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়।"

    (সহিহ মুসলিম: ৮৫৪)

  2. জুমার দিনে দোয়া কবুল হয়

    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    "জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।"

    (সহিহ বুখারি: ৯৩৫, সহিহ মুসলিম: ৮৫২)

  3. গুনাহ মাফের সুযোগ

    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    "যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অজু করে, তারপর জুমার নামাজে যায়, মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে এবং নামাজ আদায় করে, তার এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।"

    (সহিহ মুসলিম: ৮৫৭)


শুক্রবারের বিশেষ আমল

শুক্রবারের দিন মুসলমানদের জন্য কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যা করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।

১. গোসল করা ও উত্তম পোশাক পরিধান করা

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, উত্তমভাবে অজু করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং নামাজের জন্য মসজিদে যায়, সে মহান প্রতিদান পাবে।"

(আবু দাউদ: ৩৪৩)

২. সূরা আল-কাহফ তিলাওয়াত করা

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।"

(সহিহ বুখারি: ১০০১)

৩. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

"তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ এই দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছানো হয়।"

(আবু দাউদ: ১৫৩১)

৪. জুমার নামাজ আদায় করা

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি বিনা কারণে তিনটি জুমার নামাজ পরিত্যাগ করবে, তার অন্তরে আল্লাহ মোहर মেরে দেবেন।"

(তিরমিজি: ৫০০)

৫. অধিক পরিমাণে দোয়া করা

যেহেতু জুমার দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে যখন দোয়া কবুল হয়, তাই এই দিন বেশি বেশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত।


উপসংহার

শুক্রবার মুসলমানদের জন্য এক মহামূল্যবান দিন, যেখানে অগণিত ফজিলত ও বরকত রয়েছে। এই দিন বিশেষ আমল, জুমার নামাজ ও আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা উচিত। কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত ও আমল অনুসরণ করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা সম্ভব।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র দিনের যথাযথ মূল্যায়ন ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩