ফিতরার বিধান ও গুরুত্ব

 ফিতরার বিধান ও গুরুত্ব



ইসলামি শাস্ত্রে ফিতরা (Zakat al-Fitr) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ দান, যা রমজান মাসের শেষের দিকে গরীব ও অভাবীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। এটি মুসলিমদের জন্য এক ধরনের সাধুতা, সহানুভূতি ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের প্রমাণ।

ফিতরার বিধান:

ফিতরা ঈদের দিন সুরক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্যে ইসলামি শরিয়তে একটি বাধ্যতামূলক দান হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। ফিতরা সাধারণত রমজান মাসের শেষের দিকে, ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। এটি সবার ওপর বাধ্যতামূলক, এমনকি ছোট শিশুও এতে অংশ নিতে পারে, তবে তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবকরা এটি প্রদান করবেন।

ফিতরা দেওয়ার পরিমাণ সাধারণত এক সা' (প্রায় 2.5 কেজি বা 5 পাউন্ড) খাদ্যদ্রব্য বা তার সমমূল্য অর্থ হতে পারে। খাদ্যদ্রব্য হিসেবে গম, খেজুর, খই, চাল ইত্যাদি সাধারণত ব্যবহৃত হয়, তবে স্থান ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সমপরিমাণ অর্থও হতে পারে।

ফিতরার গুরুত্ব:

১. সামাজিক দায়িত্ববোধ: ফিতরা গরীব, দরিদ্র ও অভাবী মুসলিমদের সাহায্য করার এক উপায়। এটি সমাজে সমতা ও সহানুভূতির অনুভূতি সৃষ্টি করে।

২. রমজান শেষে পরিপূর্ণতা ও পরিশুদ্ধি: রমজান মাসের সিয়াম পালন করে মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। ফিতরা এমন এক দান, যা ঈদের আনন্দকে সম্পূর্ণ করে এবং রোজাদারের ত্রুটি মুছে দেয়।

৩. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা: ঈদের দিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফিতরা দান করা হয়। এটি আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হওয়ার একটি মাধ্যম এবং ইসলামের মৌলিক আদর্শের বাস্তবায়ন।

৪. সম্প্রীতি ও ঐক্য: ফিতরা দেয়ার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের মধ্যে ঐক্য ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পায়। এটা সমাজের দরিদ্রদের জন্য একটি আশ্বাস, যে ঈদের দিনে তাদের জন্য কিছু আছে।

৫. আধ্যাত্মিক লাভ: ফিতরা দান করার মাধ্যমে একদিকে যেমন গরীবের জন্য সাহায্য করা হয়, তেমনি অন্যদিকে এটি দাতা ব্যক্তির জন্য আধ্যাত্মিক উন্নতি এনে দেয়। এর মাধ্যমে মানুষের দানশীলতা ও ত্যাগের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়, যা তার চরিত্রকে শক্তিশালী করে।

ফিতরা দেয়ার সময়:

ফিতরা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়, তবে ঈদের নামাজের পরও এটি দেয়া যেতে পারে। যাদের ঈদের নামাজের পরও দান করা হয়নি, তাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তবে, যত দ্রুত সম্ভব এটি প্রদান করা উচিত, যেন গরীবরা ঈদের দিন তাদের প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করতে পারে।

ফিতরার উদ্দেশ্য:

ফিতরার মূল উদ্দেশ্য হল ঈদের দিনে গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের আনন্দ দিতে, যাতে তারা ঈদের দিন তাদের খাদ্য ও প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য দুশ্চিন্তা না করে। এটি দানশীলতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং মুসলিমদের মধ্যে সঠিক সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশে সহায়ক।

শেষকথা, ফিতরা শুধু একটি আর্থিক দান নয়, এটি মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দায়িত্ব, যা আমাদের দায়িত্ববোধ, সহানুভূতি, ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩