ইসলাম নারীদের কী সম্মান দিয়েছে?

 ইসলাম নারীদের কী সম্মান দিয়েছে?

ইসলামে নারীদের সম্মান একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং এটি কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত মূল্যবান। ইসলামের আগমন পূর্বে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নারীরা নির্যাতন ও অবহেলার শিকার ছিল। তবে ইসলাম সেই সময়ে নারীদের নতুন মর্যাদা এবং অধিকার প্রদান করে, যা তাদের অবস্থানকে পরিবর্তন করেছে এবং সমাজে তাদের সম্মান বাড়িয়েছে।

ইসলাম নারীদের কী সম্মান দিয়েছে?


ইসলামের মধ্যে নারীদের অবস্থান

ইসলামের প্রথম যুগে, নারীদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত নিন্ম। নারীদের কোনো স্বাতন্ত্র্য ছিল না, তারা সম্পূর্ণরূপে পুরুষদের অধীন ছিল। তবে ইসলামের আগমনের পর, নারী-পুরুষের মধ্যে একটি সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম নারীদের যে সম্মান দিয়েছে, তা আগের কোনো ধর্ম বা সমাজে ছিল না।

১. আল-কুরআনের নির্দেশনা

ইসলাম নারীদের প্রতি সম্মান এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য আল-কুরআনে অনেকগুলো আয়াত নাযিল করেছে। যেমন:

  • সুরা আন-নিসা (৪:১): "হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রভু, যিনি তোমাদের এক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন, তাকেই ভয় করো।"

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝানো হয় যে, আল্লাহর কাছে পুরুষ এবং নারীর মর্যাদা সমান। সকল মানুষ, পুরুষ বা নারী, আল্লাহর কাছে সমান সম্মান পায়।

  • সুরা আত-তাওবা (৯:৭১): "মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা ভালো কাজ করতে সাহায্য করে।"

এই আয়াত নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা বলে। তারা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম।

২. নারীদের অধিকার

ইসলাম নারীদের জন্য অসংখ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হল:

‌‌(ক) মালিকানা অধিকার

ইসলাম নারীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং মালিকানা অধিকার দিয়েছে। তারা নিজের উপার্জিত টাকা বা সম্পত্তি দিয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারে। ইসলামে, নারীর সম্পত্তি তার একান্তই অধিকার, এবং স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের কোনোভাবেই তা অধিকার করার অধিকার নেই।

(খ) বিবাহ এবং তালাক

ইসলাম নারীদের বিবাহে পূর্ণ সম্মান প্রদান করেছে। নারী তার ইচ্ছা অনুযায়ী স্বামী নির্বাচন করতে পারে এবং বিয়েতে সম্মতির অধিকার তার রয়েছে। তালাকের ক্ষেত্রেও নারীর অধিকার রয়েছে, তারা প্রয়োজনে তালাক নিতে পারে, এবং পুরুষের হাতে সবকিছু ছেড়ে দেয়া হয়নি।

(গ) শিক্ষার অধিকার

ইসলাম নারীদের শিক্ষার অধিকার দিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে জীবনের যে কোনো স্তরে নারীকে শিক্ষার অধিকার দেয়া হয়েছে। হাদীসে এসেছে, "পাঠশালা থেকে ফিরে আসা কোনো পুরুষ বা নারীই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নয়, যিনি জ্ঞান লাভ করেন।"

৩. মাতা হিসেবে সম্মান

ইসলামে মা-কে অত্যন্ত সম্মানিত স্থান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন:

  • সুরা লুকমান (৩১:১৪): "আমার ওপর তোমার বাবা-মায়ের প্রতি চরম সদ্ব্যবহার করো।"

এ আয়াতের মাধ্যমে ইসলামে মা-কে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে, এবং তাকে "জন্নাতের চাবি" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামে মা-কে তিনবার বেশি সম্মানিত করা হয়েছে, অন্যদিকে বাবা-কে একবার সম্মানিত করা হয়েছে। মা-র প্রতি এই সম্মান নারীকে সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রদান করে।

৪. নারীদের সামাজিক ভূমিকা

ইসলাম নারীদেরকে সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গণ্য করে। তারা শুধু গৃহিণী নয়, বরং সমাজের উন্নয়নে সক্রিয় অংশীদার। নারীরা ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারে। ইসলামে নারীদের জন্য এমন কোন বিধি নেই যা তাদের কর্মজীবনে বাধা দেয়।

৫. মোটা, দেহগত ও মানসিক সম্মান

ইসলাম নারীদের মানসিক এবং শারীরিক শান্তির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। ইসলামে নারীদের প্রতি অশালীন ব্যবহার, অপমান বা হিংসা নিষিদ্ধ। শরীরের সৌন্দর্য, সাজ-সজ্জা অথবা বয়স নিয়ে কখনো কোনো নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয় না। নারীদের মানসিক শান্তির গুরুত্ব অনেক বেশি।

উপসংহার

ইসলাম নারীদের প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করেছে, তা মানব ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম নারীদের আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারীদের জন্য ইসলাম কেবল একটি ধর্মীয় নিয়ম নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধি যা তাদের সম্মান, নিরাপত্তা এবং আত্মবিশ্বাস নিশ্চিত করেছে। তাই, ইসলাম নারীদের যা সম্মান দিয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম বা সমাজ কখনোই দিতে পারেনি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩