রাগ নিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি
রাগ নিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি
রাগ মানুষের সহজাত অনুভূতি, যা অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত হলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ইসলামে রাগ নিয়ন্ত্রণের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আসে এবং অনেক গুনাহের পথ খুলে দেয়। রাসুল (সা.) আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কার্যকর পদ্ধতি শিখিয়েছেন। আসুন জেনে নিই, কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাগ নিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতিগুলো।
![]() |
রাগ নিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি |
১. আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া
রাগ আসলে শয়তানের অন্যতম কৌশল, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তাই রাগ অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।
📖 রাসুল (সা.) বলেছেন:
“যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রাগান্বিত হয়, তখন সে যেন বলে- ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজিম’ (আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)।”
(সহিহ বুখারি: ৩২৮২, সহিহ মুসলিম: ২৬১০)
২. চুপ থাকা
রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলা অনেক সময় বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
📜 “যখন তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয়, সে যেন চুপ থাকে।”
(মুসনাদ আহমদ: ২০০০)
কথা বললে হয়তো রাগের বশে এমন কিছু বলে ফেলতে পারেন, যা পরে অনুশোচনার কারণ হতে পারে। তাই রাগান্বিত অবস্থায় চুপ থাকাই উত্তম।
৩. অবস্থান পরিবর্তন করা
রাগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো অবস্থান পরিবর্তন করা। রাসুল (সা.) বলেছেন:
📜 “যখন তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয় এবং দাঁড়িয়ে থাকে, সে যেন বসে যায়। যদি তাতেও রাগ না কমে, তাহলে শুয়ে পড়ে।”
(আবু দাউদ: ৪৭৮২)
এভাবে অবস্থান পরিবর্তন করলে রাগ ধীরে ধীরে প্রশমিত হবে।
৪. অজু করা
রাগ আসলে আগুনের মতো, যা মানুষকে ধ্বংস করে। আগুন যেমন পানি দ্বারা নিভে যায়, তেমনি রাগও পানি দ্বারা প্রশমিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
📜 “রাগ শয়তান থেকে আসে, আর শয়তান আগুন থেকে সৃষ্টি। আর আগুন নিভানো হয় পানি দ্বারা। তাই যখন তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয়, সে যেন ওজু করে।”
(আবু দাউদ: ৪৭৮৪)
৫. দুআ পড়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এমন কিছু দুআ শিখিয়েছেন, যা রাগ কমানোর জন্য খুবই উপকারী।
📖 দুআ:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي وَاذْهَبْ غَيْظَ قَلْبِي وَأَجِرْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগফির লি যাম্বি, ওয়াযহাব গাইযা কালবি, ওয়া আজিরনি মিনাশ শাইতানির রজিম”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করুন, আমার রাগ দূর করুন এবং আমাকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।
৬. ধৈর্য ধারণ করা
রাগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ধৈর্য ধারণ করা। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
📖 “আর যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।”
(সূরা আলে ইমরান: ১৩৪)
রাসুল (সা.) বলেছেন:
📜 “শক্তিশালী সেই ব্যক্তি নয়, যে কুস্তিতে অন্যকে পরাজিত করে, বরং প্রকৃত শক্তিমান সেই, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।”
(সহিহ বুখারি: ৬১১৪, সহিহ মুসলিম: ২৬০৯)
৭. উত্তম চরিত্র গঠন করা
মুমিনের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নম্রতা ও সহনশীলতা। রাসুল (সা.) নিজেও ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও কোমল স্বভাবের।
📜 তিনি বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।”
(তিরমিজি: ১৯৭৫)
৮. ক্ষমা করা
রাগান্বিত অবস্থায় ক্ষমা করতে পারা একটি মহৎ গুণ। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
📖 “আর যখন তারা ক্রোধে উত্তেজিত হয়, তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।”
(সূরা আশ-শূরা: ৩৭)
রাসুল (সা.) বলেছেন:
📜 “যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন।”
(সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)
৯. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা
কুরআন হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তির উৎস। যখন মানুষ কুরআন পড়ে বা শোনে, তখন মন শান্ত হয় এবং রাগ দূর হয়। আল্লাহ বলেন:
📖 “নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্ত হয়।”
(সূরা রাদ: ২৮)
১০. জান্নাতের কথা স্মরণ করা
জান্নাত পাওয়ার জন্য ধৈর্যধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন:
📜 “যে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সামনে ডেকে সম্মানিত করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”
(তিরমিজি: ২০২১)
উপসংহার
রাগ নিয়ন্ত্রণ করা একজন মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ইসলামে রাগ দমন করার জন্য বিভিন্ন কার্যকর উপায় বর্ণিত হয়েছে, যেমন- আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া, চুপ থাকা, অবস্থান পরিবর্তন করা, অজু করা, দুআ পড়া, ধৈর্য ধারণ করা, ক্ষমা করা, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ আমাদের রাগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং আমরা এক সুন্দর জীবনযাপন করতে পারব।