রাসুল (সা.) এর প্রিয় খাবার এবং খাওয়ার আদব
রাসুল (সা.) এর প্রিয় খাবার এবং খাওয়ার আদব
রাসুল (সা.) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য আদর্শ ছিলেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাস এবং খাওয়ার আদবগুলির মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি কিভাবে একে অপরের প্রতি সদাচরণ ও ইসলামী নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এখানে রাসুল (সা.) এর প্রিয় খাবার এবং খাওয়ার কিছু আদব আলোচনা করা হলো।
![]() |
রাসুল (সা.) এর প্রিয় খাবার এবং খাওয়ার আদব |
রাসুল (সা.) এর প্রিয় খাবার
রাসুল (সা.) এর প্রিয় খাবার ছিল এমন খাবার যা সহজ, স্বাস্থ্যকর এবং শরীরের জন্য উপকারী ছিল। কিছু খাবার সম্পর্কে উনার পছন্দের কথা হাদিসে পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রিয় খাবার হলো:
১. খেজুর
- রাসুল (সা.) খুব পছন্দ করতেন খেজুর। এটি পুষ্টিকর, শক্তি প্রদানকারী এবং শরীরের জন্য উপকারী খাবার। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি রোজা রেখে খেজুর দিয়ে খাবার শুরু করে, তার জন্য বরকত রয়েছে।" (সহীহ বুখারি)
২. মধু
- মধু রাসুল (সা.) এর প্রিয় পানীয় ছিল। এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার এবং শরীরের জন্য অনেক উপকারী। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"মধু একটি আশ্চর্যজনক খাবার, যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।" (সহীহ বুখারি)
৩. দুধ
- দুধ ছিল রাসুল (সা.) এর আরেকটি প্রিয় খাবার। তিনি দুধ খেতে পছন্দ করতেন এবং এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর ছিল।
৪. আলুবোখারা (প্রিবি)
- রাসুল (সা.) প্রিবি বা আলুবোখারা খেতে পছন্দ করতেন। এটি শরীরের জন্য ভালো এবং হজমে সহায়ক।
৫. আটা (গমের আটা)
- রাসুল (সা.) গমের আটা দিয়ে তৈরি রুটি খেতে পছন্দ করতেন। এটি একেবারে সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত পুষ্টিকর ছিল।
৬. শুকনো মাংস (শিকর)
- রাসুল (সা.) শুকনো মাংস বা শিকর খেতেন, এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং পুষ্টিকর ছিল।
৭. শরবত এবং পানীয়
- রাসুল (সা.) সসেল পানি এবং দুধের শরবত খুব পছন্দ করতেন, যা ছিল তার প্রিয় পানীয়। বিশেষ করে, তিনি মিষ্টি পানীয় পছন্দ করতেন, তবে অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলতেন।
খাওয়ার আদব
রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় কিছু আদব অনুসরণ করতেন, যা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা। তাঁর খাওয়ার কিছু আদব এবং নিয়মাবলী:
১. বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করা
- রাসুল (সা.) খাবার শুরু করার আগে 'বিসমিল্লাহ' (بِسْمِ ٱللَّهِ) বলতেন। এটি খাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। হাদিসে এসেছে:
"যে ব্যক্তি খাবার শুরু করার আগে 'বিসমিল্লাহ' বলে, তার খাবার বরকত লাভ করে।" (সহীহ মুসলিম)
২. খাওয়ার সময় ডান হাত ব্যবহার করা
- রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় ডান হাত ব্যবহার করতেন। তিনি বলেছেন:
"ডান হাতে খাবার খাও, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়।" (সহীহ মুসলিম)
৩. খাবার শেয়ার করা
- রাসুল (সা.) খাবার শেয়ার করতে এবং অন্যকে খাবার দেওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলেছেন:
"খাবার শেয়ার করো, কারণ এতে বরকত রয়েছে।" (সহীহ মুসলিম)
৪. খাবার শেষ করার পর 'আলহামদুলিল্লাহ' বলা
- রাসুল (সা.) খাবার শেষ করার পর 'আলহামদুলিল্লাহ' (الْحَمْدُ لِلَّهِ) বলতেন, যা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুন্দর উপায়।
"যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে, আল্লাহ তার পাপ মাফ করেন।" (সহীহ মুসলিম)
৫. খাবারের মাঝে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই খাওয়া
- রাসুল (সা.) খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানী ছিলেন। তিনি কখনও অতিরিক্ত খাওয়ার পরামর্শ দেননি। তাঁর মতে, খাবার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
"একটি পাত্রের মধ্যেই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি রাখা প্রয়োজন।" (সহীহ বুখারি)
৬. খাবার বা পানীয়ের পাত্রে শ্বাস ফেলা থেকে বিরত থাকা
- রাসুল (সা.) খাবারের বা পানীয়ের পাত্রে শ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন:
"তোমরা পানীয়ের পাত্রে শ্বাস ফেলা থেকে বিরত থাকো।" (সহীহ মুসলিম)
৭. খাবারের আগে এবং পরে হাত ধোয়া
- রাসুল (সা.) খাবারের আগে এবং পরে হাত ধোয়ার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। এটি সুন্নাহ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
৮. সুন্দরভাবে খাবার গ্রহণ করা
- রাসুল (সা.) খাবার গ্রহণ করার সময় খুবই ভদ্র এবং নম্র ছিলেন। তিনি কোনো খাবারের তিক্ততা বা ত্রুটি প্রকাশ করতেন না, বরং যেটা পাওয়া যেত, তাতে সন্তুষ্ট থাকতেন।
উপসংহার:
রাসুল (সা.) এর প্রিয় খাবার ও খাওয়ার আদব আমাদের জীবনযাত্রাকে ইসলামী নিয়মে আনতে সাহায্য করে। এসব আদব অনুসরণ করলে, শুধু পুষ্টিকর খাবার গ্রহণই করা যায় না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও লাভ করা যায়। তাই, আমরা যদি রাসুল (সা.) এর খাওয়ার সুন্নাহ অনুসরণ করি, আমাদের জীবনে বরকত এবং সাফল্য আসবে।