গিবত ও মিথ্যা বলা কেন হারাম?

 গিবত ও মিথ্যা বলা কেন হারাম?

ইসলামে গিবত (পরনিন্দা) ও মিথ্যা বলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটি শুধু একটি নৈতিক অপরাধ নয়, বরং এটি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। গিবত ও মিথ্যা সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে কঠোর সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এই দুইটি কাজ ব্যক্তির আত্মিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং আখিরাতে ভয়ংকর শাস্তির কারণ হতে পারে।

 গিবত ও মিথ্যা বলা কেন হারাম?


গিবত কী?

গিবত আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষচর্চা করা। রাসুল (সা.) বলেন:

📜 "তুমি কি জানো গিবত কী?" সাহাবিগণ বললেন, "আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।" তিনি বললেন, "তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা সে অপছন্দ করে।"
(সহিহ মুসলিম: ২৫৮৯)

কেউ যদি বলে, “কিন্তু আমি যা বলেছি, তা তো সত্য”, তাও গিবত হিসাবে গণ্য হবে। তবে যদি তা মিথ্যা হয়, তাহলে তা আরও গুরুতর পাপ, যা ‘বুহতান’ (মিথ্যা অপবাদ) নামে পরিচিত।

গিবত হারাম হওয়ার কারণ

১. আল্লাহ গিবতকে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন 📖 "তোমাদের কেউ কি চাইবে যে সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? অবশ্যই তোমরা এটাকে ঘৃণা করো।"
(সূরা আল-হুজুরাত: ১২)

২. গিবত সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণ – এটি মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। – পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসা কমিয়ে দেয়।

৩. গিবত জাহান্নামের শাস্তি ডেকে আনে রাসুল (সা.) একবার মেরাজ যাত্রায় দেখেছিলেন, কিছু মানুষ নখ দিয়ে নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে আঁচড়াচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলে বলা হলো, "এরা হলো গিবতকারীরা"। (আবু দাউদ: ৪৮৭৮)

মিথ্যা বলা কেন হারাম?

মিথ্যা হলো এমন একটি অভ্যাস, যা একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র ধ্বংস করে দেয়। ইসলামে মিথ্যাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

📖 "মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকো, কারণ মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।"
(সহিহ মুসলিম: ২৬০৭)

মিথ্যা বলা হারাম হওয়ার কারণ

১. মিথ্যা ঈমান নষ্ট করে রাসুল (সা.) বলেছেন: 📜 "একজন মুমিন সমস্ত দোষ থাকতে পারে, কিন্তু সে কখনো মিথ্যাবাদী হতে পারে না।" (মুসনাদ আহমদ: ২৩৮৬০)

২. মিথ্যা কপটতা ও মুনাফিকির লক্ষণ 📜 "মুনাফিকের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে: যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে; যখন আমানত রাখা হয়, খিয়ানত করে।" (সহিহ বুখারি: ৩৩)

৩. মিথ্যা বলা শয়তানের অভ্যাস কুরআনে বলা হয়েছে: 📖 "নিশ্চয়ই আল্লাহ মিথ্যুক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না।" (সূরা আন-নাহল: ১০৫)

গিবত ও মিথ্যা থেকে বাঁচার উপায়

আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখা।
প্রতিদিন আত্মসমালোচনা করা – আমি কি কারও সম্পর্কে ভুল কিছু বলেছি?
অন্যের দোষ না দেখে নিজের ভুল সংশোধন করা।
কোনো তথ্য যাচাই না করে অন্যকে না বলা।
কোনো কথা বলার আগে ভাবা – এটি কি সত্য? এটি কি প্রয়োজনীয়?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩