ইসলামে বন্ধু নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত?
ইসলামে বন্ধু নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত?
ভূমিকা
বন্ধু মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বন্ধু যেমন ভালো পথে চালিত করতে পারে, তেমনি খারাপ পথেও নিতে পারে। ইসলাম আমাদের শুধু বন্ধুত্ব গড়ে তোলার অনুমতি দেয়নি, বরং সুস্থ ও নৈতিক বন্ধুত্ব গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে। একজন সৎ ও ধার্মিক বন্ধু জীবনকে সুন্দর করে তোলে, আর মন্দ বন্ধু ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে পারে। তাই ইসলামে বন্ধু নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
![]() |
ইসলামে বন্ধু নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত? |
বন্ধুর গুরুত্ব ইসলামে
মানুষ সামাজিক জীব, একা বসবাস করা সম্ভব নয়। কুরআন ও হাদিসে বন্ধুত্ব সম্পর্কে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
“তোমরা সতর্ক হও, সেই দিন যখন একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে, তবে মুত্তাকিরা (পরহেজগার) ব্যতিক্রম।” (সূরা যুখরুফ: ৬৭)
এই আয়াতে বোঝানো হয়েছে, যদি বন্ধুত্ব খাঁটি ও আল্লাহভীরু হয়, তবে তা পরকালের জন্য কল্যাণকর হবে। অন্যথায়, তা একসময় শত্রুতায় পরিণত হবে।
বন্ধু নির্বাচনের মানদণ্ড
ইসলামে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে একজন ভালো বন্ধুর যেসব গুণ থাকা উচিত:
১. ধর্মীয়ভাবে অনুগত হওয়া
বন্ধু নির্বাচনের প্রথম শর্ত হলো, সে যেন ধর্মীয়ভাবে অনুগত হয়। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন:
“মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের অনুসারী হয়। কাজেই, সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে, সে ব্যাপারে সতর্ক হও।” (তিরমিজি: ২৩৭৮)
অর্থাৎ, যদি বন্ধু নেককার হয়, তবে সে ভালো কাজের দিকে ডাকবে, আর যদি সে পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে সে তার সঙ্গীকে একই পথে টেনে নেবে।
২. সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হওয়া
সত্যবাদিতা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভালো বন্ধু সবসময় সত্য কথা বলবে এবং বিশ্বস্ত হবে। আল্লাহ বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।” (সূরা তওবা: ১১৯)
বন্ধু যদি মিথ্যাবাদী হয়, তবে সে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। তাই বিশ্বস্ত বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম।
৩. চরিত্রবান ও সদাচারী হওয়া
একজন প্রকৃত মুসলিম তার চরিত্র দিয়ে পরিচিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“সৎ বন্ধু সেই ব্যক্তির মতো যে সুগন্ধি বিক্রি করে, সে নিজে সুগন্ধিময় এবং তোমাকে উপহার দেয়। আর খারাপ বন্ধু হলো লোহার ধোঁকার মতো, যা পোশাকে দাগ লাগিয়ে দেয় বা পোড়ায়।” (বুখারি: ৫৫৩৪)
যে ব্যক্তি ভালো চরিত্রের অধিকারী, তার বন্ধুত্ব কল্যাণ বয়ে আনে।
৪. জ্ঞানী ও বিচক্ষণ হওয়া
জ্ঞানী বন্ধু একজন মানুষকে সঠিক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিতে পারে। অজ্ঞ বন্ধু ভুল পরামর্শ দিয়ে বিপথে পরিচালিত করতে পারে। তাই জ্ঞানী ও বিচক্ষণ বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. ঈর্ষামুক্ত ও সহানুভূতিশীল হওয়া
একজন ভালো বন্ধু কখনো ঈর্ষাপরায়ণ হয় না। সে সবসময় তার বন্ধুর কল্যাণ চায় এবং তার উন্নতিতে খুশি হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেই জিনিস পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।” (বুখারি: ১৩)
খারাপ বন্ধুদের থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা
কুরআন ও হাদিসে খারাপ বন্ধুদের থেকে দূরে থাকার জন্য কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
“তুমি পাপীদের আনুগত্য করো না, যারা ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।” (সূরা কাহাফ: ২৮)
মন্দ বন্ধুর কিছু লক্ষণ:
- মিথ্যা বলে ও প্রতারণা করে।
- গিবত ও পরনিন্দা করে।
- পাপাচারে উৎসাহিত করে।
- ঈমান ও আমলে দুর্বল করে তোলে।
এমন বন্ধুদের থেকে দূরে থাকাই উত্তম।
নির্বাচিত বন্ধুত্ব: দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ
যে বন্ধুত্ব আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, তা চিরস্থায়ী। নবী (সা.) বলেন:
“সাত শ্রেণির মানুষ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তাদের মধ্যে দুজন হলো, যারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসত।” (বুখারি: ৬৬০)
এটি প্রমাণ করে যে, সত্যিকারের ইসলামী বন্ধুত্ব কেবল দুনিয়াতেই নয়, আখিরাতেও উপকার বয়ে আনবে।
উপসংহার
বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। তাই ইসলাম আমাদেরকে ভালো বন্ধু নির্বাচনের জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা যদি ভালো চরিত্রের, আল্লাহভীরু ও সত্যবাদী বন্ধু নির্বাচন করি, তবে তা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য কল্যাণকর হবে। খারাপ বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা এবং ভালো বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা আমাদের জন্য অপরিহার্য।