ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের বিধান

ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের বিধান

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের পথনির্দেশনা প্রদান করে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সন্তানের প্রতিপালন। ইসলাম সন্তানকে শুধু একটি জীবিত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং তাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক শিক্ষা, নীতি এবং আদর্শ প্রদান করতে গুরুত্ব দেয়। এ কারণেই ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের জন্য একাধিক বিধান রয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিম বাবা-মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের বিধান


১. সন্তানের জন্ম: ইসলামের দৃষ্টিতে

ইসলামে সন্তানের জন্ম একটি মহান আনন্দের বিষয়। ইসলাম সন্তান জন্মকে আল্লাহর একটি নেয়ামত এবং বেহেশতী দান হিসেবে দেখে। ইসলামে একটি শিশুর জন্মের পর, বাবা-মাকে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, যাতে তারা তাদের সন্তানের জন্য সঠিক পরিবেশ এবং মনোভাব প্রদান করতে পারে। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো, সন্তান জন্মের পর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানো এবং শিশুর জন্য মঙ্গল কামনা করা।

২. সন্তানকে সঠিক শিক্ষা প্রদান

ইসলামে সন্তানদের জন্য সঠিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: "তোমাদের সন্তানদের জন্য ভালো কাজের শিক্ষা দিন, এবং তাদের আদর্শগত দিক থেকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিন।" (সুরা আত-তাহরীম, ৬৬:৬)

ইসলাম সন্তানের জন্য এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যেখানে সঠিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং আল্লাহর প্রতি প্রেম এবং সম্মান শেখানো হয়। সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা, যেমন নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি শেখানো একান্ত প্রয়োজন।

৩. সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন

ইসলামে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা এবং স্নেহ প্রদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন: "তোমরা তোমাদের সন্তানদের প্রতি দয়া এবং সদাচরণ করো, কারণ যে বাবা-মা তাদের সন্তানদের ভালোবাসে না, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে তিরস্কৃত হয়।" (সহীহ মুসলিম)

এছাড়াও, সন্তানের সঠিক শারীরিক এবং মানসিক যত্ন নেওয়া, তাদের খাবার এবং পোশাকের দিকে নজর দেওয়া, ভালো পরিবেশে বড় করা, তাদের সঠিক শখ এবং আগ্রহগুলি চিহ্নিত করা ইত্যাদি বিষয়গুলো ইসলামে গুরুত্ব পেয়েছে।

৪. অভিভাবকদের কর্তব্য

বাবা-মায়ের দায়িত্ব শুধু তাদের সন্তানের শারীরিক যত্ন নেওয়া নয়, বরং তাদের মানসিক এবং ধর্মীয় উন্নতি নিশ্চিত করাও। ইসলাম অভিভাবকদের কাছে সন্তানের জন্য সঠিক পথে পরিচালনার নির্দেশ দেয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: "তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।" (সুরা তাহরীম, ৬৬:৬)

এটি বুঝায় যে, অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের আল্লাহর পথে পরিচালনা করা, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে এবং পরকালীন জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে।

৫. সৎ চরিত্র গঠন

ইসলামে সন্তানের চরিত্র গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম সন্তানের মধ্যে সৎ চরিত্র গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়, যেন তারা সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এটা প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু হতে হবে। সন্তানের মধ্যে ধৈর্য, সত্যবাদিতা, সহানুভূতি, দয়া, এবং আল্লাহর প্রতি ভয় এবং প্রেম গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের চেষ্টা করা উচিত।

৬. সঠিক রোল মডেল

ইসলামে বাবা-মা তাদের সন্তানের জন্য প্রথম রোল মডেল হিসেবে কাজ করেন। একজন শিশু তার পিতামাতার আচরণ এবং চরিত্র থেকে অনেক কিছু শিখে। তাই, বাবা-মাদের উচিত ইসলামি মূল্যবোধ ও নৈতিকতা অনুসরণ করা এবং সন্তানের সামনে ভালো উদাহরণ তৈরি করা।

৭. সন্তানদের প্রতি দোয়া

ইসলামে সন্তানদের জন্য দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদের জন্য দোয়া করা, যেন তারা সৎ, ধর্মপরায়ণ, এবং সাফল্যমন্ডিত জীবনের অধিকারী হয়, ইসলামিক জীবনাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৮. সামাজিক এবং নৈতিক দায়বদ্ধতা

ইসলামে সন্তানদের সামাজিক এবং নৈতিক দায়িত্বশীলতা শেখানো হয়। ইসলামে সন্তানদের অভ্যাস ও জীবনশৈলীতে গুণাবলী এবং সততা সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

উপসংহার

ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের বিধান মানবিক মর্যাদা, নৈতিকতা, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। ইসলাম সন্তানদের শারীরিক, মানসিক, এবং ধর্মীয় দিক থেকে সঠিকভাবে প্রতিপালন করার নির্দেশনা দেয়। একজন মুসলিম বাবা-মা তার সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সর্বদা সচেতন থাকবেন, যেন তারা পরকালেও আল্লাহর কাছে সফলতা অর্জন করতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩