স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক মানব জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এটি কেবল সামাজিক সম্পর্ক নয়, বরং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ককে একটি বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, এবং ইসলামের বিধান অনুযায়ী স্বামীর উপর স্ত্রীর প্রতি কিছু বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ইসলামে স্বামীর এই দায়িত্বের সঠিক পরিসরে পালন করা একটি সুখী ও সফল সংসার জীবন গড়ে তুলতে সহায়ক।

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব


১. স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা

প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। ইসলামে স্বামীর উপর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা অত্যন্ত জরুরি। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। তারা একে অপরকে সুখ-দুঃখের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করবে এবং তাদের সম্পর্ককে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন:

"তোমরা তাদের (স্ত্রীর) সাথে ভালোভাবে বসবাস করো।" (আল-নিসা: ১৯)

২. আর্থিক দায়িত্ব

স্বামীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর আর্থিক সুরক্ষা প্রদান। স্ত্রীর খাবার, পোশাক, বাসস্থানের খরচসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণের দায়িত্ব স্বামীর। ইসলামে স্বামীকেই স্ত্রীর সমস্ত আর্থিক খরচ বহন করতে বলা হয়েছে, যদিও স্ত্রী নিজের আয় করতে পারেন, তবুও তার দায়িত্ত্ব স্বামীর উপর। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন:

"তোমরা তাদের (স্ত্রীর) জন্য তাদের যথাযথ খরচ প্রদান করো..." (আল-নিসা: ৩৪)

৩. শারীরিক নিরাপত্তা

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক শুধু মানসিক বা আর্থিক সম্পর্ক নয়, এটি শারীরিক সম্পর্কও। স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপদ পরিবেশে রাখাটা স্বামীর দায়িত্ব। স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতি এবং তার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সচেতন থাকা স্বামীর জন্য জরুরি। শরীরের প্রতি শারীরিক সহমর্মিতা ও যত্নও স্বামীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

৪. মানসিক সমর্থন

স্বামীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো স্ত্রীর মানসিক ও মানসিক সহায়তা প্রদান করা। একটি নারী তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুঃখ-কষ্ট অনুভব করতে পারে। স্বামী হিসেবে তার উচিত স্ত্রীর মানসিক সমর্থন দেওয়া, তার দুঃখ-যন্ত্রণায় পাশে থাকা এবং তাকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী করে তোলা।

৫. ধর্মীয় দিক থেকে সাহায্য করা

একজন স্বামীর স্ত্রীর প্রতি ধর্মীয় দায়িত্বও রয়েছে। তাকে ইসলামের বিধান ও শরিয়তের মৌলিক শিক্ষা দেওয়া এবং তার ধর্মীয় জীবনের প্রতি যত্নবান হওয়া স্বামীর কর্তব্য। এর মাধ্যমে স্ত্রীর ঈমান ও ধর্মীয় অনুশীলন উন্নত হতে পারে। কোরআনে বলা হয়েছে:

"তোমরা নিজেদের পরিবারকে সালাত আদায়ে তৎপর করো..." (সূরা তাহরিম: ৬)

৬. সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক মূল্যবোধ

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক মূল্যবোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর জন্য ভালো উপদেশ দেওয়া, তাকে ভালোভাবে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া এবং পারিবারিক শান্তি ও ভালোবাসা বজায় রাখা। যে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত থাকে, সেখানে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কও মধুর হয়।

৭. একে অপরকে ক্ষমা করা

কোনো সম্পর্কের মধ্যে কখনো ভুল-ত্রুটি হয়। একে অপরকে ক্ষমা করা এবং সম্পর্কের মধ্যে ধৈর্য ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী হিসেবে স্ত্রীর ভুলের জন্য তাকে ক্ষমা করা এবং কোনো ধরনের অহঙ্কার বা গর্ব না করে সম্পর্ককে সুন্দর রাখা জরুরি। ইসলামে আছেন কিছু বিষয়, যা এই সম্পর্কের মধ্যে কৃতজ্ঞতা এবং ক্ষমার ওপর গুরুত্ব দেয়।

৮. সর্বদা পাশে থাকা

স্বামীর দায়িত্ব শুধু স্ত্রীর সুখী সময়ে নয়, বরং দুঃখকষ্টের সময়ও তার পাশে থাকা। কঠিন সময়ে স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো এবং তার মনোবল বাড়ানোর জন্য সবর করা গুরুত্বপূর্ণ। যখন স্ত্রীর জীবন বা স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে, তখন স্বামীর উচিত তাকে সহানুভূতি এবং শক্তি দেওয়া।

৯. একটি সুখী পরিবার গঠন করা

স্বামী হিসেবে পরিবার গঠন এবং তার সঠিক পথনির্দেশনা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব নয়, বরং সন্তানদের জন্যও একটি সঠিক পরিবার গঠন করা স্বামীর কর্তব্য। একটি সুস্থ ও সুখী পরিবার গঠন করা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ভাল শিক্ষা এবং উদাহরণ হতে পারে।

১০. ইচ্ছাশক্তি ও প্রতিশ্রুতি

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক, যেখানে একটি ইচ্ছাশক্তি এবং প্রতিশ্রুতি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সম্পর্ক সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য স্বামীর কর্তব্য হলো স্ত্রীর প্রতি ইচ্ছাশক্তি এবং জীবনভর প্রতিশ্রুতি দেওয়া। তাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ জীবন নির্মাণ করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩