পর্দার বিধান ও এর উপকারিতা

পর্দার বিধান ও এর উপকারিতা

ইসলামে পর্দা বা হিজাব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি কেবলমাত্র নারীদের জন্য নয়, বরং পুরুষদের জন্যও রয়েছে বিশেষ কিছু নির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে পর্দা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং রসুল (সা.) তাঁর হাদীসে এই বিধানটির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ইসলামে পর্দার বিধান মানবতার জন্য শান্তি, নিরাপত্তা, মর্যাদা, এবং সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে।

পর্দার বিধান ও এর উপকারিতা

পর্দার বিধান কি?

পর্দা, শব্দটি সাধারণত একটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সুরক্ষার ধারণাকে প্রতিনিধিত্ব করে। ইসলামী পর্দা বলতে মূলত আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী শরীরের কিছু অংশ আবৃত রাখা বা গোপন করার প্রক্রিয়াকে বুঝানো হয়। এটি এমন এক প্রথা, যা একদিকে ব্যক্তিগত স্বীকৃতি ও মর্যাদাকে সম্মানিত করে এবং অন্যদিকে সামাজিক জীবনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখে।

আল-কুরআনে পর্দার বিধান সম্পর্কিত বিভিন্ন আয়াত রয়েছে। তন্মধ্যে বিশেষ করে সুরা নূরের আয়াত ৩১ এবং সুরা আহযাবের আয়াত ৫৯ উল্লেখযোগ্য, যেখানে আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দার নির্দেশনা দিয়েছেন।

নারীদের জন্য পর্দার বিধান

সুরা নূর, আয়াত ৩১-এ আল্লাহ তাআলা বলেন:

"অতএব, মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে এবং তাদের সৌন্দর্য দেখানো ছাড়া, যেটি স্বাভাবিকভাবে প্রকাশিত হয়, তা প্রকাশ না করে। এবং তারা যেন তাদের স্তনগুলিকে (চাদর বা খোঁড়া দিয়ে) ঢাকা রাখে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, ..."

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারীদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ, শরীরের বিশেষ অংশ ঢেকে রাখার কথা বলেছেন, যাতে তাদের শালীনতা রক্ষা হয় এবং তারা সমাজে সম্মানিত থাকে। এই বিধান নারীদের জন্য তাদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদা সংরক্ষণে সহায়ক।

পুরুষদের জন্য পর্দার বিধান

ইসলামে পর্দার বিধান শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, পুরুষদের জন্যও রয়েছে। সুরা নূরের আয়াত ৩০-এ আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে তাদের দৃষ্টি নত রাখার এবং শরীরের কিছু অংশ ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন:

"অতএব, মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে; এটি তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের যা করেন তা জানেন।"

এতে বোঝা যায়, পুরুষদের জন্যও তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা জরুরি, যা পর্দার একটি অংশ।

পর্দার উপকারিতা

১. সামাজিক শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা

পর্দার বিধান সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখে। এটি মানুষের মধ্যে দৃষ্টিগত বা শারীরিক আকর্ষণ কমায়, যার ফলে অশ্লীলতা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। সমাজে একে অপরকে সম্মান করার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠে, যা একে অপরকে পরিপূর্ণতার দিকে পরিচালিত করে।

২. আত্মমর্যাদা এবং সম্মান

পর্দার মাধ্যমে নারীরা নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারেন। এটি তাদের শালীনতা এবং সম্মান প্রদর্শনের একটি উপায়, যা সমাজে তাদের উচ্চ মর্যাদা তৈরি করে। এটি তাদের মানুষ হিসেবে সম্মানিত হতে সহায়তা করে এবং একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করে।

৩. পারিবারিক শান্তি

ইসলামে পর্দার বিধান পারিবারিক সম্পর্কের শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক। এটি অপ্রত্যাশিত দৃষ্টির কারণে গঠিত সম্পর্কের অস্থিরতা কমায় এবং পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে এবং অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সম্মান ও আস্থা বৃদ্ধি পায়।

৪. ধর্মীয় শৃঙ্খলা

পর্দার বিধান মুসলিমদের ধর্মীয় শৃঙ্খলার অংশ। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর নির্দেশনা পালন করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। এটি ঈমান এবং তাকওয়ার একটি প্রকাশ।

৫. বিশ্বস্ততার অনুভুতি

যখন নারীরা পর্দা পালন করেন, তখন তারা নিজেদেরকে বিশ্বস্ত, মার্জিত এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি নিষ্ঠাবান হিসেবে উপস্থাপন করেন। এই অভ্যাস তাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

৬. স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা

পর্দা একজন নারীর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি অপ্রত্যাশিত দৃষ্টির কারণে মানসিক চাপ এবং অস্থিরতা কমায়, ফলে একজন ব্যক্তি আরও শান্ত এবং সৃজনশীল মনোভাব পোষণ করতে পারেন।

পর্দার বিধান কি শর্তে পালন করা হয়?

ইসলামে পর্দা পালন করার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন, এটি পরিপূর্ণভাবে শরীর ঢেকে রাখতে হবে, এতে কোনো ধরনের প্রলোভন বা দৃষ্টি আকর্ষণকারী বৈশিষ্ট্য থাকতে পারবে না, এবং সমাজে একে অন্যের সম্মান বজায় রেখে পর্দা রাখা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩