দাম্পত্য জীবনে বরকত আনার উপায়

 দাম্পত্য জীবনে বরকত আনার উপায়

দাম্পত্য জীবন মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুখী দাম্পত্য জীবন শুধু ব্যক্তিগত শান্তিই আনে না, বরং সমাজ ও পরিবারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইসলাম আমাদের দাম্পত্য জীবনে বরকত আনতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো কীভাবে ইসলামের আলোকে দাম্পত্য জীবনে বরকত আনা যায়।

 দাম্পত্য জীবনে বরকত আনার উপায়


১. আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান ও তাকওয়া বজায় রাখা

দাম্পত্য জীবনে বরকত আনার মূল চাবিকাঠি হলো আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান ও তাকওয়া রাখা। স্বামী-স্ত্রী যদি আল্লাহভীতি নিয়ে জীবনযাপন করেন, তবে তাদের দাম্পত্য জীবনে বরকত নেমে আসবে। কুরআনে এসেছে:

"যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি অবশ্যই তাদের প্রতি আকাশ ও পৃথিবী থেকে বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম।" (সুরা আল-আ‘রাফ: ৯৬)

তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যদি আল্লাহর বিধান মেনে চলেন, তবে তাদের দাম্পত্য জীবন বরকতময় হবে।


২. একে অপরের প্রতি সদয় ও সম্মান প্রদর্শন করা

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সম্মান থাকা আবশ্যক। নবী করিম (সা.) বলেছেন:

"তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করে।" (তিরমিজি: ৩৮৯৫)

একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর প্রতি সদয় হন এবং স্ত্রী যদি স্বামীকে যথাযথ সম্মান দেন, তাহলে সংসারে শান্তি ও বরকত নেমে আসবে।


৩. রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ অনুসরণ করা

রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি তার স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণ করতেন, তা অনুসরণ করলে আমাদের দাম্পত্য জীবনেও বরকত আসবে। তিনি স্ত্রীদের সাথে কৌতুক করতেন, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং গৃহস্থালি কাজে সাহায্য করতেন।


৪. পরিবারের হালাল রুজির ব্যবস্থা করা

দাম্পত্য জীবনে বরকত আসার জন্য স্বামীকে অবশ্যই হালাল রুজির ব্যবস্থা করতে হবে। হারাম উপার্জন সংসারে অশান্তি ও অনিষ্ট ডেকে আনে। কুরআনে বলা হয়েছে:

"হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কিছু হালাল ও পবিত্র, তা খাও এবং শয়তানের পথ অনুসরণ কোরো না।" (সুরা আল-বাকারা: ১৬৮)


৫. দোয়া ও ইস্তেগফার করা

দাম্পত্য জীবনে বরকত আনার জন্য স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং ইস্তেগফার পড়া। ইস্তেগফার বেশি পড়লে আল্লাহ তা'আলা জীবনকে বরকতময় করে দেন।


৬. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা

স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হতে পারে না।" (তিরমিজি: ১৯৫৪)

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে এবং বরকত বাড়ায়।


৭. একে অপরের জন্য সময় বের করা

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে অনেক স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সময় দিতে পারেন না। কিন্তু সম্পর্কের উন্নতির জন্য সময় দেয়া অপরিহার্য। একসঙ্গে ইবাদত করা, একসঙ্গে খাওয়া এবং পারস্পরিক ভালোবাসা প্রকাশ করা দাম্পত্য জীবনে বরকত আনে।


৮. ক্ষমাশীল মনোভাব রাখা

দাম্পত্য জীবনে ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি হবেই। এগুলো ক্ষমা করে দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন:

"যারা রাগ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।" (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)


৯. ভালো কথা বলা ও পরনিন্দা পরিহার করা

স্বামী-স্ত্রীর উচিত একে অপরের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলা এবং কোনোভাবেই খারাপ বা কটু কথা না বলা। কারণ খারাপ কথা সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি করে এবং দাম্পত্য জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে।


১০. সন্তানদের উত্তমভাবে লালন-পালন করা

দাম্পত্য জীবনে বরকত আনার অন্যতম উপায় হলো সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী লালন-পালন করা। সন্তানরা যদি নেককার হয়, তবে তা পরিবারের জন্য বরকতের কারণ হয়।


উপসংহার

দাম্পত্য জীবন বরকতময় করতে হলে ইসলামিক শিক্ষা মেনে চলা জরুরি। আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতি, হালাল রুজি এবং সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমেই সুখী ও বরকতময় দাম্পত্য জীবন গড়ে তোলা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বরকতময় দাম্পত্য জীবন দান করুন। আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩