সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য ও দর্শনীয় স্থান
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য ও দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, যা বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কেবল নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং এখানকার স্বচ্ছ নীল জল, সাদা বালুর সৈকত, নারকেল গাছের সারি এবং জীববৈচিত্র্যের জন্যও এটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই দ্বীপের প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে এক অনন্য সৌন্দর্য।
![]() |
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য ও দর্শনীয় স্থান |
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিশেষত্ব
সেন্টমার্টিন দ্বীপ তার স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। এর কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
- স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও সাদা বালুর সৈকত
- দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ
- সমুদ্রতীরবর্তী নারকেল গাছের সারি (স্থানীয়দের কাছে "নারিকেল জিঞ্জিরা" নামে পরিচিত)
- বিচিত্র সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য
- মনোরম সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানসমূহ
১. ছেঁড়া দ্বীপ
সেন্টমার্টিনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছেঁড়া দ্বীপ। এটি মূলত একটি ছোট দ্বীপ, যা জোয়ার-ভাটার কারণে মাঝে মাঝে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে প্রাকৃতিক প্রবাল, স্বচ্ছ নীল পানি ও নিরিবিলি পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
২. পশ্চিম সৈকত (Sunset Beach)
সেন্টমার্টিনের পশ্চিম দিকের সৈকতকে "সানসেট বিচ" বলা হয়। এখানে বসে সন্ধ্যাবেলা সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতিই অন্যরকম। নরম বালির উপর বসে বা হাঁটতে হাঁটতে এই সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
৩. পূর্ব সৈকত (Sunrise Beach)
যারা ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য Sunrise Beach এক আদর্শ স্থান। এখানে সূর্যোদয়ের মুহূর্তে সমুদ্রের পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে এক অনন্য রূপ ধারণ করে।
৪. প্রবালদ্বীপ ও সামুদ্রিক প্রাণী
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আশেপাশে রয়েছে প্রচুর প্রবাল ও সামুদ্রিক প্রাণী। স্কুবা ডাইভিং বা স্নরকেলিং করলে আপনি প্রবালপ্রাচীর এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ দেখতে পাবেন।
৫. মাছ ধরার গ্রাম
দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা মূলত মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। তাদের গ্রাম ঘুরে দেখা যেতে পারে। তাজা মাছ, লবস্টার, কাঁকড়া ইত্যাদি এখানে সহজেই পাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন সেন্টমার্টিন?
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে প্রথমে কক্সবাজার যেতে হবে, তারপর টেকনাফ হয়ে নৌপথে যেতে হবে।
- ঢাকা বা দেশের অন্যান্য শহর থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য বাস/ফ্লাইট পাওয়া যায়।
- কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পৌঁছানোর জন্য বাস বা মাইক্রোবাস ব্যবহার করা যায়।
- টেকনাফ থেকে নৌযান (সেন্টমার্টিন শিপ, কেয়ারি সিন্দাবাদ, গ্রীন লাইন, এলসিটি কুতুবদিয়া ইত্যাদি) এর মাধ্যমে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের আদর্শ সময়
অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। এই সময় আবহাওয়া শুষ্ক ও মনোরম থাকে এবং সমুদ্রও শান্ত থাকে। বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় নৌযান চলাচল সীমিত হয়ে যায়।
সেন্টমার্টিনে খাবার ও থাকার ব্যবস্থা
খাবার:
সেন্টমার্টিনে পাওয়া যায়:
- টাটকা সামুদ্রিক মাছ
- লবস্টার, কাঁকড়া ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার
- নারকেল ও নানা প্রকার স্থানীয় খাবার
হোটেল ও রিসোর্ট:
সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে:
- ব্লু মেরিন রিসোর্ট
- সী পার্ল বিচ রিসোর্ট
- প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট
- সান্তা মারিয়া রিসোর্ট
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- প্লাস্টিক ও পরিবেশ দূষণকারী বস্তু দ্বীপে না ফেলা।
- প্রবাল ও সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতি না করা।
- আবহাওয়া সম্পর্কে আগেই জেনে নেয়া।
- ক্যাশ টাকা সঙ্গে রাখা, কারণ এখানে এটিএম বা ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ কম।
- নৌযানের সময়সূচি আগে থেকে জেনে নেওয়া।
উপসংহার
সেন্টমার্টিন শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি প্রকৃতির এক অপূর্ব দান। যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি এক আদর্শ গন্তব্য। স্বচ্ছ নীল পানি, নির্জন পরিবেশ, প্রবালের অপূর্ব দৃশ্য এবং সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মুগ্ধকর দৃশ্য সত্যিই অবিস্মরণীয়।