কুরবানির মাসআলা ও ফজিলত
কুরবানির মাসআলা ও ফজিলত
কুরবানির সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ইসলামে কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা আমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.) ও পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর ত্যাগের স্মরণে পালন করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কুরবানির দিনে আদম সন্তানের জন্য সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কুরবানি করা।” (তিরমিজি: ১৪৯৩)
![]() |
কুরবানির মাসআলা ও ফজিলত |
কুরবানির ফজিলত
কুরবানি করার অনেক ফজিলত রয়েছে, যেমন:
- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ: কুরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে।
- গুনাহ মাফ: হাদিসে এসেছে, “কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি নেকি পাওয়া যায়।” (ইবনে মাজাহ: ৩১২৬)
- পরকালীন পুরস্কার: রাসূল (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন কুরবানির পশু তার শিং, চামড়া ও পশমসহ হাজির হবে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।” (তিরমিজি: ১৪৯৫)
- সম্পদশালীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল: যারা সামর্থ্যবান, তাদের জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব।
কুরবানির মাসআলা ও বিধান
১. কুরবানি কার জন্য ওয়াজিব?
কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তগুলো হলো:
- মুসলিম হওয়া।
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
- সামর্থ্যবান হওয়া (নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া)।
২. কোন কোন পশু কুরবানি করা যায়?
ইসলামী শরিয়তে নির্ধারিত পশুগুলো হলো:
- গরু, মহিষ (১ জন থেকে ৭ জন পর্যন্ত শরিক হতে পারেন)।
- ছাগল, ভেড়া (১ ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি দিতে হয়)।
- উট (১ জন থেকে ৭ জন পর্যন্ত শরিক হতে পারেন)।
৩. কুরবানির পশুর বয়স ও শারীরিক অবস্থা
- গরু-মহিষ: কমপক্ষে ২ বছর বয়স হতে হবে।
- ছাগল-ভেড়া: কমপক্ষে ১ বছর বয়স হতে হবে।
- উট: কমপক্ষে ৫ বছর বয়স হতে হবে।
- পশু অঙ্গহীন, চোঁখ অন্ধ, খুবই দুর্বল বা অপুষ্ট হলে কুরবানি জায়েজ নয়।
৪. কুরবানির সময়সীমা
- জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে কুরবানি করা যায়।
- কুরবানি করার উত্তম সময় ঈদের প্রথম দিন।
৫. কুরবানির গোশত বণ্টন
কুরবানির পশুর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত:
- এক অংশ গরিব ও দরিদ্রদের জন্য
- এক অংশ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্য
- এক অংশ নিজের পরিবারের জন্য
৬. মহিলারা কি কুরবানি করতে পারেন?
হ্যাঁ, যদি কোনো মহিলা আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হন, তবে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব।
৭. নফল কুরবানি করা যায় কি?
হ্যাঁ, কুরবানি ওয়াজিব না হলেও, কেউ চাইলে নফল কুরবানি করতে পারেন এবং এর জন্য অনেক সওয়াব রয়েছে।
কুরবানির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত
- কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম, যদি না পারেন তবে অন্য কাউকে দিয়ে করানো যায়।
- জবাই করার সময় “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নত।
- কুরবানির সময় দোয়া করা এবং তাওবা-ইস্তিগফার করা উত্তম।
- কুরবানির গোশত সংরক্ষণ ও গরিবদের মাঝে বিতরণ করা উচিত।
কুরবানির কিছু সাধারণ ভুল ও বিভ্রান্তি
- অনেকে মনে করেন যে কুরবানি শুধু হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতির জন্য করা হয়, অথচ এটি মূলত আল্লাহর নির্দেশ।
- অনেক মানুষ কুরবানির গোশত পুরোপুরি নিজের কাছে রেখে দেন, অথচ গরিবদের অংশ দেওয়া সুন্নত।
- অনেকে মনে করেন যে নারীদের জন্য কুরবানি করা নিষিদ্ধ, অথচ এটি ভুল ধারণা।
উপসংহার
কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মানুষের ত্যাগ ও আল্লাহর আনুগত্যের প্রতীক। আমাদের উচিত কুরবানির মূল উদ্দেশ্য ও নিয়ম-কানুন মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ইবাদত পালন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।