আল্লাহ মানুষের যেসব গুণ পছন্দ করেন

আল্লাহ মানুষের যেসব গুণ পছন্দ করেন

ইসলামে মানুষের চারিত্রিক গুণাবলির গুরুত্ব অপরিসীম। কেবল নামাজ-রোজা নয়, বরং নৈতিকতা, মানবিকতা ও সদাচরণও ইসলামের একটি বড় অংশ। কুরআন এবং হাদিসে অসংখ্যবার আল্লাহ তা'আলা এমন কিছু গুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যেসব গুণ একজন মানুষকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে। এই লেখায় আমরা জানব—আল্লাহ কোন কোন গুণাবলি পছন্দ করেন এবং সেগুলো কিভাবে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা যায়।

আল্লাহ মানুষের যেসব গুণ পছন্দ করেন

১. তাকওয়া (আল্লাহভীতি)

কুরআনে বলা হয়েছে:

"নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীনদের (আল্লাহভীরুদের) ভালোবাসেন।" (সূরা আল-তাওবা: ৪)

তাকওয়া হলো এমন এক গুণ, যা মানুষকে সব ধরনের পাপ ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে। যার অন্তরে আল্লাহভীতি আছে, সে সব সময় নিজেকে সংযত রাখে এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকে।


২. ধৈর্য (সবর)

আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)

কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করা একজন মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ গুণ। বিপদে ধৈর্য ধরে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে চলা মু’মিনদের গুণ।


৩. ইনসাফ (ন্যায়বিচার)

আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।” (সূরা আল-মায়েদা: ৪২)

ন্যায়বিচার বা ইনসাফ ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবক্ষেত্রে ইনসাফ চর্চা একজন মুসলিমের দায়িত্ব।


৪. তওবা (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা)

আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং নিজেকে পরিশুদ্ধকারীদের ভালোবাসেন।” (সূরা আল-বাকারা: ২২২)

যে ব্যক্তি ভুল করে তা স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।


৫. শুচিতা ও পবিত্রতা

পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা, যেখানে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় পবিত্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।


৬. ঈমানদারী ও সত্যবাদিতা

হাদীসে এসেছে:

“তোমরা সত্য বলো, কারণ সত্য নেকীর দিকে নিয়ে যায় এবং নেকী জান্নাতের দিকে।” (বুখারি)

সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য মানুষকে সমাজে যেমন সবাই শ্রদ্ধা করে, তেমনি আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।


৭. বিনয় ও নম্রতা

কুরআনে বলা হয়েছে:

“আর রহমানের (পরম দয়ালু আল্লাহর) বান্দারা এমন, যারা পৃথিবীতে বিনয় সহকারে চলাফেরা করে…” (সূরা আল-ফুরকান: ৬৩)

অহংকার ইসলামে বড় গুনাহ। অন্যদিকে, বিনয় একজন মানুষের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।


৮. কৃতজ্ঞতা (শুকরিয়া)

আল্লাহ বলেন:

“যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের কল্যাণের জন্যই করে।” (সূরা লুকমান: ১২)

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন। জীবনের প্রতিটি নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা একজন প্রকৃত মুসলমানের বৈশিষ্ট্য।


৯. দানশীলতা

কুরআনে বলা হয়েছে:

“তারা আল্লাহর প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দেয়।” (সূরা আল-ইনসান: ৮)

দান-সদকা শুধু আর্থিক নয়, সময়, সাহায্য বা ভালো কথা বলাও হতে পারে দান। আল্লাহ দানশীলদের ভালোবাসেন।


১০. ক্ষমাশীলতা

আল্লাহ বলেন:

“তারা রাগকে দমন করে, মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৪)

ক্ষমাশীল হওয়া আল্লাহর গুণ। আর তিনি চান, তাঁর বান্দারাও যেন ক্ষমাশীল হয়।


কীভাবে এই গুণগুলো অর্জন করবো?

✅ নিয়মিত কুরআন পড়া ও বুঝে পড়া
✅ রাসূল (সা.) এর জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়া
✅ নামাজ-রোজা ঠিকভাবে আদায় করা
✅ নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
✅ আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলা


উপসংহার

আল্লাহ মানুষের বাহ্যিক রূপ নয়, বরং তাঁর অন্তরের তাকওয়া, চরিত্র ও আচরণকে গুরুত্ব দেন। আমরা যদি কুরআন-হাদীস অনুযায়ী চলি এবং এই গুণগুলো অর্জনের চেষ্টা করি, তাহলে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া খুব কঠিন কিছু নয়।

🤲 আল্লাহ যেন আমাদেরকে এই গুণগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করেন।


📌 আপনার মতামত:

আপনি কী মনে করেন—এই গুণগুলো আমাদের জীবনে কতটা জরুরি?
কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩