কদরের রাতের ফজিলত ও পাওয়ার উপায়

 কদরের রাতের ফজিলত ও পাওয়ার উপায়


কদরের রাতের ফজিলত ও পাওয়ার উপায় 

কদরের রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হল এক মহিমান্বিত রাত, যা ইসলাম ধর্মে অসীম বরকত ও রহমতের রাত হিসেবে বিবেচিত। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে হয়ে থাকে। কুরআন ও হাদিসে এ রাতের ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

"নিশ্চয়ই আমি একে (কুরআন) নাযিল করেছি কদরের রাতে। আর তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিব্রাইল আ.) অবতরণ করেন তাদের রবের আদেশক্রমে সকল বিধান নিয়ে। শান্তিই শান্তি, ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত।"

(সূরা আল-কদর: ১-৫)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, লাইলাতুল কদর এমন এক রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও অধিক মর্যাদাপূর্ণ। হাজার মাস অর্থাৎ প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার সমান সওয়াব একজন ব্যক্তি কদরের রাতে ইবাদত করলে পেয়ে যান।

হাদিসে কদরের রাতের ফজিলত

১. গুনাহ মাফের সুযোগ:

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

"যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাজ পড়ে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।" (বুখারি: ১৯০১, মুসলিম: ৭৬০)

২. ফেরেশতাদের আগমন:

কদরের রাতে আসমান থেকে অসংখ্য ফেরেশতা দুনিয়াতে নেমে আসেন, যারা মুমিনদের জন্য রহমত ও বরকতের দু'আ করেন।

৩. দোয়া কবুল হওয়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ:

এ রাতে আল্লাহ তাআলার রহমত অত্যন্ত প্রবল থাকে, তাই তাঁর কাছে যা চাওয়া হয়, তিনি কবুল করেন।

কদরের রাত পাওয়ার উপায়

যেহেতু কদরের নির্দিষ্ট রাত সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই, তাই আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশ রাত, বিশেষত বেজোড় রাতগুলোতে ইবাদতে মনোযোগী হওয়া।

১. ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা:

  • কুরআন তিলাওয়াত করা
  • বেশি বেশি নামাজ পড়া (তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ)
  • দোয়া করা
  • জিকির করা

২. একটি বিশেষ দোয়া:

আয়িশা (রা.) নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "যদি আমি কদরের রাত পাই, তাহলে কোন দোয়া পড়ব?"

নবীজি (সা.) বলেছেন,

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি পরম ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি: ৩৫১৩)

৩. তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ আদায় করা:

রাসুল (সা.) শেষ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারের সদস্যদেরও ইবাদতে উত্সাহিত করতেন। (বুখারি: ২০২৪, মুসলিম: ১১৭৪)

৪. সদকা ও দান করা:

কদরের রাতে দান-সদকা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, কারণ এটি হাজার মাসের সওয়াব বহন করে।

উপসংহার

লাইলাতুল কদর একটি অনন্য রহমতের রাত, যা আমাদের জীবনে অপার কল্যাণ নিয়ে আসে। এ রাতের ফজিলত অর্জন করতে হলে আমাদের উচিত একাগ্রতার সাথে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং বেশি বেশি দোয়া ও জিকির করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩