সাহরিতে সুন্নত কী কী?
সাহরিতে সুন্নত কী কী?
সাহরি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি, যা রোজার পূর্বে খাওয়ার সময়। সাহরি খাওয়া অত্যন্ত সুন্নত, এবং তা না খেলে রোজার পূর্ণতা নষ্ট হতে পারে না, তবে তা সুন্নত হিসেবে করা উচিত। সাহরি ইফতারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল, যার মাধ্যমে রোজাদাররা আল্লাহর কাছ থেকে বিশাল সাওয়াব পেতে পারে। সাহরির সময় সুন্নত হিসেবে কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলি পালন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, আজ আমরা জানবো সাহরিতে সুন্নত কী কী।
১. সাহরি খাওয়ার গুরুত্ব
সাহরি খাওয়া ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সাহরি খাওয়া বরকতের সাথে পূর্ণ।” (বুখারি) এটি আমাদের সুন্নত হিসাবে পালন করা উচিত এবং রোজার পূর্ণতা এবং বারকতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২. শেষ রাতে সাহরি খাওয়া
সাহরি খাওয়ার সময়টা নির্দিষ্ট। সাহরি শেষ হওয়ার সময় হচ্ছে ফজরের আযানের আগের সময়। এর আগে সাহরি খাওয়াটা সুন্নত, আর তার পর সাহরি খাওয়াটা হারাম নয় তবে তা জায়েজ নয়। আমাদের উচিৎ ফজর আযানের ঠিক আগে সাহরি শেষ করে ফেলানো।
৩. অল্প পরিমাণে সাহরি খাওয়া
রাসূল (সাঃ) সাহরি খাওয়ার সময় অতিরিক্ত খাওয়ার বিপরীতে পরিমাণে অল্প খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা সাহরি খাও, কারণ এতে বরকত রয়েছে।” (বুখারি)। এখানে পরিমাণের ব্যাপারে সতর্কতা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৪. খাজুর দিয়ে সাহরি শুরু করা
রাসূল (সাঃ) সাহরি খাওয়ার সময় খেজুর দিয়ে শুরু করার সুন্নত রেখে গেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা সাহরি খাও, কেননা খেজুরের মধ্যে বরকত রয়েছে।” (মুসলিম) খেজুর একটি উপকারী এবং হালকা খাদ্য, যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রোজায় তৃষ্ণা কমাতে সহায়ক।
৫. পানি পান করা
সাহরি খাওয়ার সময় পানি পান করা সুন্নত। রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে সাহরি খেতে গিয়ে পানি পান করবে, তার জন্য তা পুণ্যপূর্ণ হবে।” (আবু দাউদ)। পানি শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক এবং রোজার দিনগুলিতে তৃষ্ণা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৬. আল্লাহর কাছে দোয়া করা
সাহরি খাওয়ার পর আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা সুন্নত। সাহরি খাওয়ার সময় আমাদের দোয়া করা উচিত যাতে আল্লাহ আমাদের রোজা, ইবাদত এবং জীবনের সকল কাজ সহজ করে দেন।
৭. সাহরি খাওয়ার সময় পরিবারের সাথে একত্রে খাওয়া
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা সাহরি একত্রে খাও, কারণ তা একে অপরের প্রতি বরকত আনয়ন করে।” (বুখারি)। সাহরি পরিবারের সবাই একত্রে খাওয়া, সামাজিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে এবং আধ্যাত্মিক তৃপ্তি প্রদান করে।
৮. উত্তম মনোভাব ও শান্তি বজায় রাখা
সাহরি খাওয়ার সময় উত্তেজনা বা মনোসংযোগের অভাব থেকে দূরে থাকা উচিত। একটি শান্ত পরিবেশে সাহরি খাওয়ার সময় আমাদের মনোভাব এবং আচরণ হতে হবে পবিত্র। এটি আমাদের রোজার মান এবং বরকত বাড়িয়ে তোলে।
৯. সাহরি খাওয়ার পর ইশারা করা
তবে সাহরি খাওয়ার পর বিশেষ কোনো ঘরবন্দী কাজ বা বেশি বিশ্রাম নেয়া থেকে বাঁচা উচিত। আমাদের জন্য উচিৎ এর পর নামাজের প্রস্তুতি নেয়া এবং রোজার প্রতি আধ্যাত্মিক মনোভাব থাকা।
উপসংহার:
সাহরি শুধু একটি খাবার খাওয়ার রীতি নয়, এটি একটি আমল, যা আমাদের রোজার গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে। সাহরি খাওয়ার সময় সুন্নতগুলো পালন করলে আমাদের রোজা পূর্ণতা পাবে এবং আল্লাহর কাছ থেকে বরকত পাবো। আমাদের প্রতিদিনের সাহরি খাওয়ার জন্য মনোযোগী হওয়া উচিত এবং যেন কোনো সুন্নত ব্যতীত না থাকে।