সাহরি ও ইফতারের ফজিলত
সাহরি ও ইফতারের ফজিলত

সাহরি ও ইফতারের ফজিলত

রমজান মাস ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস, যা রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে। এ মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করেন। রোজার অন্যতম প্রধান অংশ হল সাহরি খাওয়া এবং ইফতার করা। এই দুটি আমলের বিশেষ ফজিলত ও বরকত রয়েছে, যা হাদিস ও ইসলামী শিক্ষায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
সাহরির ফজিলত ও গুরুত্ব
সাহরি হল সুবহে সাদিকের আগে খাওয়া নির্দিষ্ট খাবার, যা রোজাদারকে সারাদিন রোজা রাখার জন্য শক্তি যোগায়। ইসলামে সাহরির রয়েছে বিশেষ ফজিলত, যা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
১. সাহরির খাবারে বরকত রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে।" (সহিহ বুখারি: ১৯২৩, সহিহ মুসলিম: ১০৯৫)
২. সাহরি খাওয়া রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত রাসূল (সাঃ) নিজে সাহরি খেতেন এবং সাহরি খাওয়ার তাগিদ দিতেন। তিনি বলেছেন: "আমাদের ও আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খ্রিস্টানদের) রোজার পার্থক্য সাহরির খাবার।" (সহিহ মুসলিম: ১০৯৬)
৩. ফেরেশতারা সাহরি খাওয়ার জন্য দোয়া করেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "সাহরি একটি বরকতময় আহার। এটি ছেড়ে দিও না, যদিও তোমরা এক ঢোক পানি পান করো। কেননা আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা সাহরি গ্রহণকারীদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।" (আহমদ, সহিহ)
ইফতারের ফজিলত ও গুরুত্ব
ইফতার হলো সূর্যাস্তের পর দ্রুত রোজা ভাঙা। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং এতে রয়েছে অপরিসীম ফজিলত।
১. রোজাদারের জন্য দোয়া কবুল হয় নবী (সাঃ) বলেছেন: "তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময়, এবং মজলুমের (অত্যাচারিত ব্যক্তির) দোয়া।" (তিরমিজি: ২৫২৫)
২. ইফতার তাড়াতাড়ি করা সুন্নত রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "মানুষ যতদিন ইফতার করতে দেরি না করবে, ততদিন কল্যাণের উপর থাকবে।" (সহিহ বুখারি: ১৯৫৭, সহিহ মুসলিম: ১০৯৮)
৩. ইফতারে খেজুর খাওয়ার সুন্নত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইফতার করতেন তাজা খেজুর দিয়ে, আর যদি তা না পেতেন, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে, আর যদি তাও না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।" (আবু দাউদ: ২৩৫৬)
ইফতারের দোয়া
রোজা ভাঙার সময় এই দোয়াটি পড়া সুন্নত:
"اللهم لك صمتُ وبك آمنتُ وعليك توكلتُ وعلى رزقك أفطرتُ"
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া আ’লা রিযকিকা আফতারতু।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, তোমার ওপর ঈমান এনেছি, তোমার ওপর ভরসা করেছি, এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করেছি।
উপসংহার
সাহরি ও ইফতার ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আমল, যা রোজার পূর্ণতা দান করে। সাহরিতে বরকত ও ফেরেশতাদের দোয়া রয়েছে, আর ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। তাই আমাদের উচিত সাহরি ও ইফতারের সুন্নতসমূহ যথাযথভাবে পালন করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এ আমলগুলো গুরুত্ব সহকারে করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের বরকতপূর্ণ আমল যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।