আন্তর্জাতিক শিশুক্যান্সার সচেতনতা দিবস
আন্তর্জাতিক শিশুক্যান্সার সচেতনতা দিবস: শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের পথে
![]() |
আন্তর্জাতিক শিশুক্যান্সার সচেতনতা দিবস |
প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক শিশুক্যান্সার সচেতনতা দিবস (International Childhood Cancer Day - ICCD) পালন করা হয়। এই দিবসটি ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের প্রতি সহানুভূতি, সহায়তা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয়।
শিশুক্যান্সার: একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ
শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার একটি বিরল রোগ হলেও এটি অত্যন্ত মারাত্মক এবং জীবনঘাতী হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুক্যান্সারের চিকিৎসার সুযোগ অনেক কম, যার ফলে বেঁচে থাকার হারও তুলনামূলকভাবে কম।
শিশুক্যান্সারের সাধারণ ধরন
শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এমন কিছু ক্যান্সারের ধরন হলো:
- লিউকেমিয়া (Leukemia) – রক্তের ক্যান্সার, যা শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
- মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্যান্সার – ব্রেইন টিউমারসহ অন্যান্য স্নায়বিক ক্যান্সার।
- নিউরোব্লাস্টোমা (Neuroblastoma) – এটি সাধারণত শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে।
- উইলমস টিউমার (Wilms Tumor) – কিডনির ক্যান্সার যা সাধারণত ছোট শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
- লিম্ফোমা (Lymphoma) – লিম্ফ সিস্টেমে ক্যান্সার, যা হজকিন ও নন-হজকিন লিম্ফোমা হিসেবে পরিচিত।
- রেটিনোব্লাস্টোমা (Retinoblastoma) – চোখের ক্যান্সার, যা সাধারণত ছোট শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
শিশুক্যান্সারের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান
শিশুদের ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু কারণ ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- জিনগত সমস্যা ও বংশগত কারণ।
- পরিবেশ দূষণ এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ।
- বিকিরণ ও ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা।
- ভাইরাস সংক্রমণ (যেমন: এপস্টেইন-বার ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস)।
শিশুক্যান্সারের লক্ষণ
শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা কঠিন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যা অভিভাবকদের সচেতন হতে সাহায্য করতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী জ্বর বা সংক্রমণ
- ওজন কমে যাওয়া বা ক্ষুধামন্দা
- শরীরে অস্বাভাবিক ফোলা বা চাকা দেখা দেওয়া
- অস্থিরতা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি
- হাড় বা জয়েন্টে ব্যথা
- দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
- রক্তক্ষরণ বা সহজে আঘাত পাওয়া
চিকিৎসা ও পুনর্বাসন
শিশুক্যান্সারের চিকিৎসা বেশ জটিল এবং ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসার সাফল্যের হার অনেক বেশি। সাধারণত শিশুক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়:
চিকিৎসার পদ্ধতি
✅ কেমোথেরাপি – ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা। ✅ রেডিওথেরাপি – বিকিরণের মাধ্যমে টিউমার ধ্বংস করা। ✅ সার্জারি – আক্রান্ত টিউমার অপসারণ করা। ✅ বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট – রক্তের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী হতে পারে। ✅ ইমিউনোথেরাপি – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা।
চিকিৎসার চ্যালেঞ্জ
- উন্নতমানের চিকিৎসার অভাব
- ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থা
- পর্যাপ্ত দাতা ও রক্তের অভাব
- মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়া
সচেতনতা ও প্রতিরোধ
শিশুক্যান্সার প্রতিরোধ করা পুরোপুরি সম্ভব না হলেও কিছু সচেতনতা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:
- শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা।
- দূষিত পরিবেশ ও বিষাক্ত রাসায়নিক থেকে শিশুদের দূরে রাখা।
- গর্ভাবস্থায় মায়েদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো।
- ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া।
- ক্যান্সার গবেষণার জন্য অনুদান ও দাতব্য সংস্থাগুলোর সহযোগিতা করা।
বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ ও বাংলাদেশে পরিস্থিতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ডহুড ক্যান্সার অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংস্থা শিশুক্যান্সার নিরাময়ের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশেও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ এন্ড হসপিটাল (NICRH), সেন্টার ফর ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (CCPR) এবং বিভিন্ন হাসপাতাল ও বেসরকারি সংস্থা শিশুক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কাজ করছে।
শেষ কথা
শিশুক্যান্সার একটি গুরুতর সমস্যা হলেও সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা ও সহযোগিতার মাধ্যমে অনেক শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক শিশুক্যান্সার সচেতনতা দিবস আমাদের সুযোগ করে দেয় এই বিষয়ে আরও বেশি জানার, সচেতনতা বৃদ্ধির এবং ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর। আসুন, সবাই মিলে ক্যান্সার মুক্ত একটি ভবিষ্যৎ গড়তে সচেষ্ট হই।
"একসাথে হলে, সম্ভব সবই!" 🧡🎗