ইনসমনিয়ার কারণ ও সমাধান
ইনসমনিয়ার কারণ ও সমাধান
![]() |
ইনসমনিয়ার কারণ ও সমাধান |
ইনসমনিয়া: কারণ ও সমাধান
ইনসমনিয়া কী?
ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা হলো এক ধরনের ঘুমের সমস্যা, যেখানে ব্যক্তি রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেন না বা ঘুমের স্থায়িত্ব খুব কম হয়। এটি স্বল্পমেয়াদী (অস্থায়ী) অথবা দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) হতে পারে। ইনসমনিয়া থাকলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মেও সমস্যা হয়।
ইনসমনিয়ার কারণ
ইনসমনিয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। প্রধান কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
চাপ, দুশ্চিন্তা বা অতিরিক্ত মানসিক উদ্বেগ থাকলে মস্তিষ্ক শান্ত হতে পারে না, ফলে ঘুমাতে সমস্যা হয়।
২. বিষণ্নতা ও মানসিক রোগ
ডিপ্রেশন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা অন্যান্য মানসিক সমস্যাগুলোর কারণে ঘুম ব্যাহত হয়।
৩. অনিয়মিত জীবনযাপন
রাত জাগা, অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ বা মোবাইল-কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকাও ইনসমনিয়ার অন্যতম কারণ।
৪. শারীরিক অসুস্থতা
ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অ্যাসিডিটি, থাইরয়েড সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতাও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ইনসমনিয়া দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে স্নায়ু উত্তেজক ওষুধ বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ।
৬. ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও নিকোটিন
চা, কফি, অ্যালকোহল বা ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ইনসমনিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. কাজের চাপ ও রাতজাগা
রাতের শিফটে কাজ করলে বা অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকলে ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়, যা ইনসমনিয়ার কারণ হতে পারে।
৮. অতিরিক্ত ঘুমানোর চেষ্টা
অনেক সময় মানুষ জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করেন, যা উল্টো ফল দেয় এবং ঘুমকে আরও দূরে ঠেলে দেয়।
ইনসমনিয়ার সমাধান
ইনসমনিয়া দূর করতে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। নিচে কার্যকর কিছু উপায় দেওয়া হলো:
১. ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করুন
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠুন।
২. রাতে স্ক্রিন টাইম কমান
ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদি ব্যবহার বন্ধ করুন।
৩. মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমিয়ে ইনসমনিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
৪. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
ঘুমের অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকে চা, কফি বা নিকোটিন জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করবেন না।
৫. সঠিক খাবার খান
ঘুমানোর আগে হালকা খাবার খান এবং ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার (যেমন কলা, বাদাম) ঘুম আনতে সহায়ক।
৬. শারীরিক পরিশ্রম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে ঘুম সহজ হয়, তবে ঘুমানোর ঠিক আগে ব্যায়াম করবেন না।
৭. মেডিটেশন ও রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন
গভীর শ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম, ধ্যান বা রিল্যাক্সিং মিউজিক শুনে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
৮. প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি ইনসমনিয়া দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে ঘুমের ওষুধ বা থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
উপসংহার
ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে সঠিক জীবনযাপন ও কিছু কার্যকর কৌশল অনুসরণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যদি ইনসমনিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। সুস্থ ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে সচেতন হোন এবং জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন।