অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার কি ঘুমের সমস্যা তৈরি করে?
অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার কি ঘুমের সমস্যা তৈরি করে?
![]() |
অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার কি ঘুমের সমস্যা তৈরি করে? |
অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার ও ঘুমের সমস্যা: কারণ ও প্রতিকার
বর্তমান যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিনোদন, যোগাযোগ, কাজ কিংবা শিক্ষার প্রয়োজনেই আমরা দীর্ঘসময় স্মার্টফোন ব্যবহার করি। কিন্তু অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে কি আমাদের ঘুমের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে? গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং এটি ধীরে ধীরে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
স্মার্টফোন কীভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়?
১. নীল আলোর (Blue Light) প্রভাব
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো আমাদের মস্তিষ্কের মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মেলাটোনিন আমাদের শরীরের ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা ঘুমের আগে স্মার্টফোন ব্যবহার করি, তখন মেলাটোনিন কম নিঃসরণ হয়, যার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় এবং ঘুমের গুণগত মান কমে যায়।
২. অতিরিক্ত মানসিক উদ্দীপনা
সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও দেখা, গেম খেলা বা চ্যাট করা আমাদের মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত সক্রিয় করে তোলে। ঘুমানোর আগের মুহূর্তে বেশি মানসিক উদ্দীপনা পাওয়া মস্তিষ্ককে বিশ্রাম নিতে বাধাগ্রস্ত করে এবং এটি ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৩. নোটিফিকেশন ও বিরতিহীন ব্যবহার
অনেক মানুষ ঘুমের সময়ও স্মার্টফোন কাছে রাখেন এবং মাঝেমধ্যে নোটিফিকেশন চেক করেন, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। বারবার ফোন চেক করা বা কল/মেসেজের অপেক্ষায় থাকা মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে, যা শান্তিপূর্ণ ঘুমের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
৪. ঘুমের রুটিনের ব্যাঘাত
স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে আমরা ঘুমানোর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। ফলে আমাদের ঘুমের রুটিন নষ্ট হয়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে অনিদ্রা, ক্লান্তি ও মনোযোগের অভাব সৃষ্টি করতে পারে।
ঘুমের সমস্যা কমানোর উপায়
১. শোবার এক ঘণ্টা আগে স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করুন
ঘুমানোর আগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে স্মার্টফোনসহ সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এতে মেলাটোনিন স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন হতে পারে এবং ঘুম আসতে সহজ হয়।
২. "নাইট মোড" বা "ব্লু লাইট ফিল্টার" ব্যবহার করুন
অনেক স্মার্টফোনে "নাইট মোড" বা "ব্লু লাইট ফিল্টার" অপশন থাকে, যা নীল আলোর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এটি চালু করলে স্মার্টফোনের আলো চোখের ওপর কম চাপ ফেলে এবং মেলাটোনিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
৩. ঘুমানোর সময় ফোন দূরে রাখুন
ঘুমানোর সময় স্মার্টফোন বিছানার পাশে না রেখে দূরে রাখুন, যাতে নোটিফিকেশন বা অন্য কোনো কারণে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। চাইলে ফোন "ডিস্টার্ব না" (Do Not Disturb) মোডে রেখে দিতে পারেন।
৪. বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিবর্তে ঘুমানোর আগে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত করতে সাহায্য করে এবং ঘুম আনতে সহায়ক হয়।
৫. স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন মেনে চলুন
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে (Biological Clock) সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
উপসংহার
অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা তৈরি হওয়াটা এখন অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। বিশেষ করে নীল আলো, অতিরিক্ত মানসিক উদ্দীপনা এবং অনিয়মিত ঘুমের রুটিনের কারণে অনেকেই পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুমের অভাবে ভুগছেন। তবে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে এবং সচেতন হলে এই সমস্যাগুলো সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, স্ক্রিন টাইম কমানো এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যকর রুটিন অনুসরণ করলে ঘুমের মানোন্নয়ন সম্ভব।
তাই, ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে হলে স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।