সাহাবাদের রমাদান যাপন কেমন ছিল?
সাহাবাদের রমাদান যাপন কেমন ছিল?
রমাদান হল আত্মশুদ্ধির মাস, তাকওয়া অর্জনের মাস, এবং আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের এক অপূর্ব সুযোগ। এই বরকতময় মাসকে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) কীভাবে অতিবাহিত করতেন, তা আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সাহাবাদের রমাদান যাপনের ধরন আমাদের জন্য একটি অনুকরণীয় আদর্শ।
রমাদানে সাহাবাদের প্রস্তুতি
সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) রমাদানের ছয় মাস আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করতেন। তাঁরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন যেন তাঁদেরকে রমাদান পর্যন্ত পৌঁছে দেন এবং এই মাসের বরকত দান করেন। আবার রমাদানের পরবর্তী ছয় মাস তাঁরা আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করতেন, যেন তাঁদের রমাদানের আমল কবুল হয়।
তারা কীভাবে রোজা রাখতেন?
সাহাবারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে রোজা রাখতেন। তাঁরা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকতেন না, বরং গুনাহের সকল পথ থেকেও নিজেদের রক্ষা করতেন। তাঁরা রোজার আসল উদ্দেশ্য—তাকওয়া অর্জনের প্রতি গুরুত্ব দিতেন।
কুরআন তিলাওয়াত ও ইবাদত
রমাদানে সাহাবারা কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) প্রতিদিন কুরআন খতম করতেন। অন্য অনেক সাহাবাও দিনে ও রাতে প্রচুর কুরআন তিলাওয়াত করতেন। রাতের বেলা তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদ ও তারাবির নামাজ পড়তেন।
ইফতার ও সাহরির গুরুত্ব
সাহাবারা খুবই সাধারণ খাবার দিয়ে ইফতার করতেন। তাঁরা বেশি খাওয়া পছন্দ করতেন না, বরং অল্প আহার করতেন, যাতে ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারেন। সাহরির সময় তাঁরা দেরি করতেন এবং ইফতার দ্রুত করতেন, কেননা এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ।
সাদাকাহ ও দান-খয়রাত
রমাদানে সাহাবাদের মধ্যে দান-খয়রাতের প্রবণতা বহুগুণ বেড়ে যেত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমাদানে সবচেয়ে বেশি দান করতেন এবং তাঁর দান-খয়রাত প্রবল বাতাসের চেয়েও দ্রুত ছিল। সাহাবারা রাসূলের অনুসরণে দান-খয়রাত করতেন এবং গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতেন।
ইতিকাফ ও রাত জাগরণ
সাহাবারা রমাদানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে নিয়মিত ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবাদেরও উৎসাহিত করতেন। তাঁরা রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতেন।
সাহাবাদের কাছে রমাদানের শিক্ষা
রমাদান শেষে সাহাবারা শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদ উদযাপন করতেন না, বরং তাঁরা নিজেদের মধ্যে তাকওয়া ও ইবাদতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সংকল্পবদ্ধ হতেন। তাঁরা মনে করতেন, রমাদান তাঁদের জন্য এক প্রশিক্ষণের মাস, যাতে তাঁরা সারা বছর আল্লাহর আনুগত্যে থাকতে পারেন।
উপসংহার
সাহাবাদের রমাদান যাপনের ধরণ আমাদের জন্য এক অনন্য আদর্শ। তাঁরা রমাদানকে শুধু আনুষ্ঠানিক রোজা রাখার মাস হিসেবে দেখতেন না, বরং এটি ছিল আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া বৃদ্ধি, এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। আমাদের উচিত তাঁদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে রমাদানকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানো।