কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া প্রতিকার

 কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া প্রতিকার 


কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া প্রতিকার 

কোষ্ঠকাঠিন্য বা Constipation এমন একটি সমস্যা, যা বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এটি প্রধানত অন্ত্রের সংকোচন কমে যাওয়ার কারণে ঘটে, যার ফলে শখানিকভাবে মলত্যাগে অসুবিধা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ এবং এর উপশমের জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে। এই পোস্টে, আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য মোকাবেলা করার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করবো।

১. জল পান করা

কোষ্ঠকাঠিন্যের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো শরীরে পানির অভাব। পর্যাপ্ত জল পান করলে অন্ত্রের সঠিক কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং মলের নরম হওয়ার প্রক্রিয়া উন্নত হয়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে চেষ্টা করুন। সকালবেলা উঠেই একটি গ্লাস পানি পান করুন এবং দিনভর প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না।

২. ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া

ফাইবার বা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে খুবই উপকারী। এটি অন্ত্রের পরিপাক কার্যক্রমকে উন্নত করে এবং মলকে নরম করে। আপনি যদি আপনার খাদ্যতালিকায় ফাইবার যুক্ত খাবার যোগ করেন, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটা কমে যাবে। কিছু ফাইবারযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে:

  • ফলমূল (আপেল, কলা, পেয়ার, কাঁঠাল, স্ট্রবেরি)
  • শাকসবজি (সবুজ শাক, গাজর, বিট, ব্রকলি)
  • শস্য (দুধ, ওটস, ব্রাউন রাইস)
  • বাদাম ও বীজ (আখরোট, তিল, মিষ্টি বাদাম)

৩. লিন্টন এবং গরম জল

লিন্টন বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায়। লিন্টন বা ছেঁড়া তরমুজের রস পেটে এক ধরনের আরামদায়ক অনুভূতি এনে দেয়। গরম জলও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ভালো। একটি গ্লাস গরম পানি পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় এবং মলত্যাগ সহজ হয়।

৪. অলিভ অয়েল (অলিভ তেল)

অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল অন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। অলিভ অয়েল কিছুটা খেলে মল নরম হতে শুরু করে, এবং মলত্যাগ সহজ হয়। এটি অন্ত্রের পরিপাক ব্যবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। প্রতিদিন ১ চা চামচ অলিভ অয়েল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

৫. লেবুর রস এবং মধু

লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করলে অন্ত্রের পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। লেবুর ভিটামিন সি শরীরের পানির শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং মলকে নরম করে, অন্যদিকে মধু অন্ত্রের প্রাকৃতিক কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করে।

৬. আখরোট এবং মাখন

আখরোটে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। মাখন ও আখরোট মিশিয়ে খেলে অন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত হয় এবং মল নরম হতে থাকে।

৭. তরমুজের রস

তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পানি রয়েছে যা অন্ত্রের পানির অভাব দূর করতে সহায়ক। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে এবং অন্ত্রের কাজ সুষ্ঠু রাখতে সাহায্য করে।

৮. ব্যায়াম

কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক সময় শারীরিক অনুশীলনের অভাবে হয়। ব্যায়াম নিয়মিত করলে অন্ত্রের পরিপাকক্রিয়া সুস্থ থাকে। একঘেয়ে জীবনযাত্রা থেকে বেরিয়ে কিছু হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়াম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান হতে পারে।

৯. প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান

কিছু প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে কিছু পরিচিত ভেষজ উপাদান হচ্ছে:

  • অলিভ তেল: অন্ত্রকে নরম করতে সাহায্য করে।
  • অশ্বগন্ধা: এটি পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও কমায়।
  • আমলকি: এটি পেট পরিষ্কার রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

১০. রাত্রে ঘুমানোর আগে গরম দুধ ও মধু

গরম দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সহজে কমে যায়। দুধের ক্যালসিয়াম এবং মধুর প্রাকৃতিক শক্তি মল স্রাবকে সহজ করে তোলে।

১১. নারকেল তেল

নারকেল তেলও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। এটি অন্ত্রের জন্য খুব উপকারী এবং পরিপাকক্রিয়াকে সাহায্য করে।

১২. পানীয় হিসেবে গরম আদা চা

গরম আদা চা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। এটি পেটের গ্যাস, অ্যাসিডিটি, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

উপসংহার

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। উপরোক্ত ঘরোয়া প্রতিকারগুলি নিয়মিত পালন করলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটাই কমে যাবে। তবে যদি সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩