ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন ও শেষ যুগের ঘটনা
ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন ও শেষ যুগের ঘটনা
ইয়াজুজ ও মাজুজ হল দুটি বিশাল মানবগোষ্ঠী, যাদের কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মুক্ত করা হবে। তারা পৃথিবীতে ব্যাপক ফিতনা সৃষ্টি করবে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। কুরআন ও হাদিসে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
![]() |
ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন ও শেষ যুগের ঘটনা |
🔸 তারা হজরত নূহ (আ.)-এর বংশধর।
🔸 তারা আদম (আ.)-এর বংশধর হলেও অত্যন্ত বর্বর ও ধ্বংসাত্মক জাতি।
🔸 তাদের সংখ্যা হবে অগণিত, তারা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
📖 রাসুল (সা.) বলেছেন:
“ইয়াজুজ-মাজুজের দল এত বেশি হবে যে, তাদের বিপরীতে একজন মুমিনের তুলনায় ৯৯৯ জন থাকবে।” (সহিহ বুখারি: ৬৫৩০)
🔹 ইয়াজুজ-মাজুজের বেষ্টনী ও তাদের আবদ্ধ হওয়া
🔸 জুলকারনাইন তাদের অত্যাচার বন্ধ করতে একটি বিশাল প্রাচীর তৈরি করেছিলেন।
🔸 এই প্রাচীর তামা ও লোহার তৈরি এবং এত শক্তিশালী যে তারা আজ পর্যন্ত এটি ভেদ করতে পারেনি।
📖 আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
“যখন ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হবে এবং প্রত্যেক উচ্চ স্থান থেকে ধেয়ে আসবে, তখন সত্য প্রতিশ্রুতি (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে।” (সূরা আল-আম্বিয়া: ৯৬-৯৭)
🔸 হাদিসে এসেছে, তারা প্রতিদিন সেই প্রাচীর খোঁড়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।
🔸 কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ তাদের বের হওয়ার অনুমতি দেবেন।
🔹 ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়ার পরের ঘটনা
✅ ১. তারা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে
- তারা এমন হিংস্র হবে যে, তাদের যাত্রাপথের সমস্ত পানি শুকিয়ে যাবে।
- তারা যা পাবে ধ্বংস করে ফেলবে এবং মানুষ হত্যা করবে।
📖 রাসুল (সা.) বলেছেন:
“তারা এত বিশালসংখ্যক হবে যে, তাদের প্রথম দল যখন কোন নদী অতিক্রম করবে, তখন সম্পূর্ণ পানি পান করে ফেলবে। পরবর্তী দল এসে বলবে, ‘এখানে একসময় পানি ছিল!’” (সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭)
✅ ২. তারা আকাশের দিকে তীর ছুঁড়বে
- তারা নিজেদেরকে এত শক্তিশালী মনে করবে যে, আকাশের দিকেও তীর ছুড়বে।
- তীর রক্তমাখা হয়ে ফিরে আসবে, যা দেখে তারা ভাববে, তারা আসমানের অধিবাসীদেরও পরাজিত করেছে! (ইবনে মাজাহ: ৪০৭৫)
✅ ৩. ইসা (আ.) তাদের ধ্বংস করবেন
- তখন হজরত ইসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা পাহাড়ে আশ্রয় নেবেন।
- ইসা (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, এবং আল্লাহ ইয়াজুজ-মাজুজের ওপর বিশেষ কীট পাঠাবেন, যা তাদের গলাতে ঢুকে যাবে এবং তারা একসাথে মারা যাবে।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“এরপর আল্লাহ ইয়াজুজ-মাজুজের ওপর বিশেষ কীট পাঠাবেন, যা তাদের ঘাড়ে ঢুকে যাবে, ফলে তারা এক মুহূর্তেই মারা যাবে।” (সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭)
✅ ৪. তাদের মৃতদেহ পৃথিবীকে দুর্গন্ধময় করে তুলবে
- তাদের দেহের দুর্গন্ধে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
- তখন আল্লাহ বিশেষ পাখি পাঠাবেন, যারা তাদের মৃতদেহ তুলে নিয়ে সাগরে ফেলে দেবে।
✅ ৫. মুসলিমরা পুনরায় শান্তিতে বসবাস করবে
- এরপর এক সুবর্ণ যুগ আসবে, যেখানে পৃথিবী শান্তিতে ভরে যাবে।
- সম্পদ এত বেশি হবে যে, লোকজন দান করার জন্য কাউকে খুঁজে পাবে না!
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“সেই সময় একজন ব্যক্তি দান করার জন্য কাউকে খুঁজে পাবে না।” (সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭)
🔹 ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে বাঁচার উপায়
✅ ১. শক্তিশালী ঈমান রাখা
- যারা প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য আল্লাহ বিশেষ আশ্রয় দেবেন।
✅ ২. আল্লাহর কাছে দোয়া করা
- রাসুল (সা.) দাজ্জাল ও ইয়াজুজ-মাজুজের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য বিশেষ দোয়া পড়তে বলেছেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন ‘আযাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ‘আযাবিল কবর, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল।”
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের শাস্তি, কবরের শাস্তি, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা এবং মসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।” (সহিহ মুসলিম: ৫৮৮)
✅ ৩. হজরত ইসা (আ.)-এর পাশে থাকার চেষ্টা করা
- সে সময় যারা প্রকৃত মুসলমান থাকবে, তারা ইসা (আ.)-এর নেতৃত্বে থাকবে।
✅ ৪. সূরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করা
- এটি দাজ্জালের পাশাপাশি ইয়াজুজ-মাজুজের ফিতনা থেকেও রক্ষা করতে পারে।
🔹 উপসংহার
🔸 ইয়াজুজ-মাজুজ কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে।
🔸 তারা বেষ্টনী ভেঙে বের হয়ে দুনিয়াজুড়ে তাণ্ডব চালাবে।
🔸 হজরত ইসা (আ.) তাদের বিনাশের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, এবং আল্লাহ বিশেষ কীট পাঠিয়ে তাদের ধ্বংস করবেন।
🔸 এরপর পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
📖 আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইয়াজুজ-মাজুজের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন! আমিন! 🤲