রমাদানে রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

 রমাদানে রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

রমাদানে রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল


রমাদান হলো সংযম, আত্মশুদ্ধি ও ধৈর্যের মাস। এ মাসে আমাদের উচিত সমস্ত খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করা এবং উত্তম চরিত্র অর্জন করা। রাগ মানুষের স্বভাবজাত একটি অনুভূতি হলেও, অতিরিক্ত রাগ অনেক সময় আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত রমাদানে, যখন আমাদের ধৈর্যশীল ও নম্র থাকা উচিত, তখন রাগ নিয়ন্ত্রণ করা আরও জরুরি হয়ে পড়ে।

রমাদানে রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা

রমাদান কেবল উপবাসের মাস নয়; এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধির মাস। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"রোজা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যদি রোজা রাখে, তবে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং চিৎকার না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে রমাদানে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। রাগ আমাদের সংযম ভঙ্গ করতে পারে এবং রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

রমাদানে রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল

১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করুন

রাগের সময় "আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম" (আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) পড়ুন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"যখন তোমাদের কারও রাগ আসে, সে যেন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।" (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৮০)

২. চুপ থাকুন এবং অবস্থান পরিবর্তন করুন

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"যদি তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয়, তবে সে যেন চুপ থাকে।" (আহমাদ, হাদিস: ২১৩৭৭)

এছাড়া, যদি দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে বসে পড়ুন, আর বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন। এতে রাগ কমে যাবে।

৩. ওজু করুন

হাদিসে এসেছে:

"নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের কাছ থেকে আসে, আর শয়তান আগুন দ্বারা সৃষ্টি। আর আগুন পানি দ্বারা নেভানো হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি রাগান্বিত হয়, সে যেন ওজু করে।" (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৮৪)

৪. রাগের সময় দুআ করুন

রমাদানে আমাদের উচিত বেশি বেশি দুআ করা। বিশেষ করে রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিচের দুআটি পড়তে পারেন:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَأَذْهِبْ غَيْظَ قَلْبِي، وَأَجِرْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মাগফির লি জান্বি, ওয়া আযহিব গাইযা কালবি, ওয়া আজিরনি মিনাশ শাইতানির রাজীম।"

অর্থ: "হে আল্লাহ, আমার পাপ ক্ষমা করুন, আমার অন্তরের ক্রোধ দূর করুন এবং আমাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে রক্ষা করুন।"

৫. ধৈর্যচর্চা করুন

রমাদান ধৈর্যের মাস। যদি কেউ আপনাকে উত্তেজিত করে, তবে নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে এটি ধৈর্য পরীক্ষার একটি অংশ। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।

৬. কুরআন তিলাওয়াত ও যিকির করুন

কুরআন তিলাওয়াত ও যিকির করলে অন্তর শান্ত হয়। রাগের সময় "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" পাঠ করা যেতে পারে। এটি অন্তরকে প্রশান্ত করে।

৭. পরিস্থিতি বুঝে নিন ও ইতিবাচক চিন্তা করুন

রাগ সাধারণত কোনো কারণে হয়। সমস্যার গভীরে গিয়ে চিন্তা করুন এবং ধৈর্য ধরে সিদ্ধান্ত নিন। অনেক সময় আমরা অপ্রয়োজনীয় কারণে রাগ করি, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়।

উপসংহার

রমাদান আমাদের জন্য সংযমের শিক্ষা নিয়ে আসে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করাও এক ধরনের ইবাদত, যা আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের সকলকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার তৌফিক দান করুন এবং উত্তম চরিত্র গঠনের সামর্থ্য দিন। আমীন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩