সহীহ মুসলিম এবং সহীহ বুখারির পার্থক্য
সহীহ মুসলিম এবং সহীহ বুখারির পার্থক্য
সহীহ মুসলিম এবং সহীহ বুখারি ইসলামী হাদিস গ্রন্থের দুটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বই। উভয়ই মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, তবে তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যা জানলে আমাদের হাদিস সংক্রান্ত জ্ঞান আরও স্পষ্ট হবে। আসুন, তাদের মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা করি।
![]() |
সহীহ মুসলিম এবং সহীহ বুখারির পার্থক্য |
১. লেখক এবং তাঁর কাজ
-
সহীহ বুখারি:
লেখক হচ্ছেন ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক আল-বুখারি (রহ.)। তিনি ৯শ' হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রায় ৬০০,০০০ হাদিস থেকে ৭,275টি হাদিস নির্বাচন করেছেন, যা তিনি অত্যন্ত কড়া মাপকাঠি দিয়ে যাচাই করেছেন। সহীহ বুখারি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। -
সহীহ মুসলিম:
লেখক হচ্ছেন ইমাম মুসলিম ইবনে হajjাজ (রহ.)। তিনি ৮শ' হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রায় ৩০০,০০০ হাদিস থেকে ৩,০০০ হাদিস নির্বাচন করেছেন, যা তিনি একইভাবে যাচাই-বাছাই করেছেন। সহীহ মুসলিমও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, তবে সহীহ বুখারি থেকে কিছু কম হাদিস ধারণ করে।
২. গ্রন্থের সংখ্যা এবং বিষয়বস্তু
-
সহীহ বুখারি:
সহীহ বুখারি মোট ৯৮ অধ্যায় বা "বাব" এ বিভক্ত। এটি বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়, ইবাদত, হালাল-হারাম, ফিকহ, আচার-ব্যবহার এবং অন্যান্য ইসলামিক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করে। -
সহীহ মুসলিম:
সহীহ মুসলিম ৫৭ অধ্যায়ে বিভক্ত এবং এটি মূলত ধর্মীয় আমল, ফিকহ, এবং আচার-ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে। সহীহ মুসলিমে কিছু হাদিস সহীহ বুখারির তুলনায় আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত।
৩. নির্ভরযোগ্যতার শর্ত
-
সহীহ বুখারি:
সহীহ বুখারির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর চরম নির্ভরযোগ্যতা। বুখারি সমস্ত হাদিসকে খুব কঠোর শর্তে যাচাই করেছেন, এর মধ্যে কখনও কোন সাক্ষী ছাড়াই বা কোনো যঈফ (দুর্বল) রাবী থাকলে তিনি সেই হাদিস গ্রহণ করেননি। -
সহীহ মুসলিম:
সহীহ মুসলিমেও খুব কঠোর যাচাই করা হয়েছে, তবে সহীহ বুখারির তুলনায় কিছুটা নরম শর্তাবলী অনুসৃত হয়েছে। তাই, সহীহ মুসলিমের মধ্যে কিছু হাদিস সহীহ বুখারির চেয়ে কম শক্তিশালী হতে পারে, তবে তারা এখনও প্রমাণিত এবং বিশুদ্ধ।
৪. হাদিসের সংখ্যা
-
সহীহ বুখারি:
সহীহ বুখারি মোট ৭,275টি হাদিস ধারণ করে (যদি ‘মুআল্লাক’ বা অংশত হাদিস বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ২,৬০০+ হাদিস থাকে)। এর মধ্যে সবগুলো হাদিসই সহীহ এবং উচ্চমানের। -
সহীহ মুসলিম:
সহীহ মুসলিমে মোট ৩,०০০ হাদিস রয়েছে। এটি ছোট তবে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, যা ইসলামী আইন ও বিশ্বাসের ব্যাপারে যথেষ্ট শক্তিশালী দিক নির্দেশনা দেয়।
৫. হাদিসের বর্ণনা এবং বিন্যাস
-
সহীহ বুখারি:
সহীহ বুখারি হাদিসগুলিকে বিভিন্ন বিভাজনে রেখেছেন এবং তার হাদিসের অনেকগুলোই দীর্ঘ আছ। তিনি তা খুবই বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন এবং সেগুলি সহজেই চিহ্নিত করার জন্য মূল শ্রেণীভুক্ত করেছেন। -
সহীহ মুসলিম:
সহীহ মুসলিমের হাদিসগুলি প্রায় একইভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হলেও, তার হাদিসগুলির বর্ণনা অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত। এটি মূলত মুসলিমদের জন্য সহজে বুঝতে উপযোগী।
৬. বিশ্বস্ততার দৃষ্টিকোণ
-
সহীহ বুখারি:
সহীহ বুখারি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বিশেষ করে, এর রাবীদের যাচাই করা হয় সবচেয়ে কঠোর শর্তে, এবং প্রায় একবারও দুর্বল রাবী বাছাই করা হয়নি। -
সহীহ মুসলিম:
সহীহ মুসলিমও খুব সম্মানিত, তবে তা কিছুটা রিল্যাক্সড শর্তে নির্বাচিত। এটি দুর্বল রাবীদের ক্ষেত্রে কম কঠোর ছিল, কিন্তু তবুও বিশ্বস্ত এবং প্রামাণিক গ্রন্থ।
উপসংহার:
সহীহ বুখারি এবং সহীহ মুসলিম উভয়ই ইসলামী হাদিস গ্রন্থের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সহীহ বুখারি একটু বেশি কড়া শর্তাবলী মেনে হাদিস বাছাই করেছেন, যার ফলে এটি অধিকতর নির্ভরযোগ্য হিসাবে বিবেচিত। তবে সহীহ মুসলিমও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক হাদিস সংকলন। উভয়েরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এবং মুসলিমদের জন্য উভয়ের হাদিসই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।