ছোট ছোট আমল কিন্তু বড় সওয়াবের কাজ

 ছোট ছোট আমল কিন্তু বড় সওয়াবের কাজ

ইসলামে অনেক ছোট ছোট আমল আছে যা মহান সওয়াবের কারণ হতে পারে। ছোট কাজ হলেও তাদের ফল অত্যন্ত বড় এবং এগুলো আমাদের জীবনে শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথপ্রদর্শক। এখানে এমন কিছু ছোট আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো যা মহান সওয়াবের কারণ হতে পারে।

ছোট ছোট আমল কিন্তু বড় সওয়াবের কাজ

১. কালেমা তায়্যিবা পাঠ করা

কালেমা তায়্যিবা (لا إله إلا الله محمد رسول الله) পাঠ করার মাধ্যমে একজন মুসলমানের পাপ মুছে যায় এবং তার জন্য সওয়াব বৃদ্ধি পায়। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি এই কালেমা পাঠ করবে, তার সমস্ত পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে।" (সহীহ মুসলিম)


২. আস্তাগফিরুল্লাহ (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা)

একটি ছোট অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। রাসুল (সা.) প্রতিদিন ৭০-১০০ বার 'আস্তাগফিরুল্লাহ' বলতেন। এর মাধ্যমে পাপ ক্ষমা হয় এবং আল্লাহর কাছ থেকে রহমত পাওয়া যায়।


৩. বিসমিল্লাহ (بِسْمِ ٱللَّهِ)

প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে 'বিসমিল্লাহ' বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সমস্ত কাজে বরকত আনে এবং সওয়াব বাড়ায়। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি কোনো কাজ শুরু করার আগে 'বিসমিল্লাহ' বলে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।" (সহীহ মুসলিম)


৪. হাসানাহ প্রদান করা

কোনো মুসলমানকে হাসি দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে স্বাগত জানানো বা তাকে সাহায্য করা, এমনকি একটি সুন্দর কথা বলাও সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"তোমাদের মধ্যে সেরা সেই ব্যক্তি, যে তার ভাইকে হাসি দিয়ে স্বাগত জানায় এবং তার মুখে সুন্দর কথা বলে।" (সহীহ বুখারি)


৫. ধৈর্য ধারণ করা

ধৈর্য ধারণ করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত। বিশেষ করে দুঃখ, কষ্ট বা পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধারণ করা বড় সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"ধৈর্যধারণকারী ব্যক্তির জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে, যা তারা কোনো সময় দেখবে না।" (সহীহ মুসলিম)


৬. একা একা সুন্নাহ অনুযায়ী সালাম দেওয়া

এটি একটি ছোট কাজ হলেও এর মধ্যে অনেক সওয়াব রয়েছে। একে অপরকে সালাম দেওয়া শুধু সম্পর্কের সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে না, বরং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারও লাভ হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি অন্যকে সালাম দেয়, সে আল্লাহর রহমতের এক অংশ লাভ করে।" (সহীহ মুসলিম)


৭. তাহিয়াতুল মসজিদ (মসজিদে ঢোকার সময় দুই রাকআত সালাত আদায় করা)

মসজিদে প্রবেশের সময় দুই রাকআত সালাত আদায় করা বড় সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"তোমরা মসজিদে ঢোকার পর দুই রাকআত সালাত পড়ো, তা হলো তাহিয়াতুল মসজিদ।" (সহীহ বুখারি)


৮. নেক নিয়তের মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজ করা

আমরা দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করি, তা তখন সওয়াবের কাজ হয়ে যায়। যেমন—কোনো কাজ শুরু করার সময় ‘ইন্নাল্লাহাল মালা’ বলতে চাওয়ার মাধ্যমে কাজের সওয়াব বৃদ্ধি হতে পারে।


৯. ইসলামিক বই বা জ্ঞান প্রচার করা

যে ব্যক্তি ইসলামিক জ্ঞান বা হাদিস, কুরআন শেখানোর মাধ্যমে অন্যদের উপকারে আসে, তার জন্য সওয়াব বৃদ্ধি পায়। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি আমার এক হাদিস মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়, সে যেন আমার সাথে থাকল।" (সহীহ বুখারি)


১০. চোখের এক নজরে দান করা

একজন মুসলমান তার সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এমনকি এক পয়সাও দান করলে সওয়াব লাভ করতে পারে। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি নিজ গুণে পয়সা দান করে, তার জন্য আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।" (সহীহ মুসলিম)


১১. অন্যকে উপদেশ দেওয়া

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, অন্যকে সৎ উপদেশ দেওয়া এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা বড় সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"তোমরা একে অপরকে সৎ উপদেশ দিয়ো, আর এতে আল্লাহর রাহে সাহায্য করবে।" (সহীহ মুসলিম)


১২. একটি ভালো কাজের জন্য অন্যকে উৎসাহিত করা

যে ব্যক্তি অন্যকে ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত করে, তার জন্য আল্লাহ বিশেষ সওয়াব লিখে দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি ভালো কাজে উৎসাহিত করে, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।" (সহীহ মুসলিম)


উপসংহার:

ইসলামে ছোট ছোট আমল আছে, যা যদি নিয়মিত করা হয়, তা আমাদের জীবনে বড় সওয়াব এবং আল্লাহর কাছ থেকে রহমত অর্জনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের উচিত, প্রতিদিন এমন ছোট ছোট আমলগুলো পালন করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩