বিয়ে ও বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলামে কেমন?
বিয়ে ও বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলামে কেমন?
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব
ইসলামে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং মানব জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য নয়, বরং সামাজিক ও পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যও অপরিহার্য। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:
"আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পন্ন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যেও যারা যোগ্য তাদেরও। যদি তারা গরিব হয় তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সম্পদশালী করবেন। আল্লাহ মহাদাতা, সর্বজ্ঞ।" (সূরা আন-নূর: ৩২)
![]() |
বিয়ে ও বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলামে কেমন? |
বিয়ের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা
১. নৈতিক শুদ্ধতা ও পবিত্রতা রক্ষা: বিয়ে মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে এবং শারীরিক চাহিদাকে হালাল পথে পূরণ করতে সাহায্য করে। ২. সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করা: এটি পরিবার ও সমাজের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক সৃষ্টি করে। ৩. সন্তান জন্ম ও বংশবৃদ্ধি: ইসলামে সন্তান জন্মদান ও নৈতিক শিক্ষাদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৪. মানসিক প্রশান্তি ও সুখ: একজন স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের জন্য সান্ত্বনা ও নিরাপত্তার উৎস।
বিয়ের শর্ত ও বিধান
ইসলামে বিয়েকে সহজ করা হয়েছে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে: ১. বর ও কনের সম্মতি: ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে বিয়ে দেওয়া জায়েজ নয়। ২. মাহর (যৌতুক): স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ দেওয়া আবশ্যক। ৩. সাক্ষী: বিয়েতে অন্তত দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম সাক্ষী থাকা বাধ্যতামূলক। ৪. ওয়ালির অনুমতি: ইসলামে কন্যার অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) ইসলামে কেমন?
বিয়ে ইসলামে অত্যন্ত পবিত্র বন্ধন হলেও, কোনো কারণে দাম্পত্য জীবন টেকসই না হলে বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ রয়েছে। তবে এটি সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল কাজ। নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন:
"আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল কাজ হলো তালাক।" (আবু দাউদ, ২১৭৮)
তালাকের প্রক্রিয়া ও শর্ত
১. সর্বশেষ সমাধান হিসেবে তালাক: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ হলে প্রথমে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করতে হবে। ২. তিন তালাক একসঙ্গে দেওয়া নিষিদ্ধ: একবারে তিন তালাক দিলে তা ইসলামসম্মত নয়। বরং ধাপে ধাপে তালাক দেওয়াই উত্তম। ৩. ইদ্দত কাল: তালাকের পর স্ত্রীকে তিন মাস (তিন হায়েজ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ৪. সুস্পষ্ট ও সংযত ভাষায় তালাক: তালাক দেওয়ার সময় স্বামীকে স্পষ্ট ও বোঝার মতো ভাষায় তালাক উচ্চারণ করতে হবে।
খোলা (স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক নেওয়া)
ইসলামে শুধু স্বামী নয়, স্ত্রীও তালাক চাইতে পারে, যাকে খোলা বলা হয়। এটি তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন স্ত্রী যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারবেন।
তালাকের পর পুনরায় বিয়ে
১. রুজু: প্রথম ও দ্বিতীয় তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী পুনরায় মিলিত হতে চাইলে ইদ্দতকালে রুজু করতে পারে। ২. হালালা: যদি কেউ তৃতীয় তালাক দেয়, তবে স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে বৈধভাবে বিয়ে করতে হবে এবং স্বামীর মৃত্যুর পর বা তালাকের পর আগের স্বামীর সঙ্গে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। তবে এটি পরিকল্পিতভাবে করা হারাম।
উপসংহার
বিয়ে ও তালাক উভয়ই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, আর তালাক একান্ত বাধ্য হলে তা শালীনভাবে সম্পন্ন করতে হয়। ইসলাম সবসময় বিবাহকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে এবং পারিবারিক সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে। তাই আমাদের উচিত ইসলামের বিধান অনুযায়ী বিবাহ ও তালাক সংক্রান্ত বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করা।