কুরআনে উল্লেখিত জ্যোতির্বিজ্ঞান: এক বিস্ময়কর বাস্তবতা
কুরআনে উল্লেখিত জ্যোতির্বিজ্ঞান: এক বিস্ময়কর বাস্তবতা
জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রাচীনকাল থেকেই মানব সভ্যতার অন্যতম বিস্ময়কর একটি শাখা। মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের গতি পর্যবেক্ষণ করেছে এবং এর মাধ্যমে সময় গণনার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আধুনিক বিজ্ঞানের বহু আবিষ্কার কুরআনে বহু শতাব্দী পূর্বেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা কুরআনে উল্লেখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত আয়াত পর্যালোচনা করব।
![]() |
কুরআনে উল্লেখিত জ্যোতির্বিজ্ঞান: এক বিস্ময়কর বাস্তবতা |
১. মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও বিস্তৃতি
আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্ব "Big Bang" বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। কুরআন এই সত্যটি বহু পূর্বেই উল্লেখ করেছে:
“অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন, যা ছিল ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ...” (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১১)
এছাড়াও কুরআনে বলা হয়েছে:
“আমি আকাশমণ্ডলীকে শক্তিশালী করেছি এবং নিশ্চয়ই আমরা একে সম্প্রসারিত করে চলেছি।” (সূরা আয-যারিয়াত ৫১:৪৭)
এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে, যা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত সত্য।
২. পৃথিবীর আকৃতি
একসময় মানুষ বিশ্বাস করত পৃথিবী সমতল, কিন্তু কুরআনে বহু পূর্বেই পৃথিবীর গোলাকৃতির ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে:
“তিনি রাতকে দিনের ওপর এবং দিনকে রাতের ওপর মুড়িয়ে দেন...” (সূরা আয-জুমার ৩৯:৫)
আরবি শব্দ “কাওয়্যার” অর্থ হল মুড়িয়ে দেওয়া, যা গোলাকার আকৃতির ধারণা দেয়।
৩. সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষপথ
বহু পূর্বে ধারণা ছিল সূর্য স্থির, কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে:
“এবং তিনিই সূর্য ও চন্দ্রকে এক নিয়মে পরিচালিত করেন; প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিচরণ করে।” (সূরা আর-রাদ ১৩:২)
আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, সূর্যও গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে।
৪. নক্ষত্রের মৃত্যু ও কৃষ্ণগহ্বর
বর্তমান বিজ্ঞান বলে, নক্ষত্রের মৃত্যু হলে তা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। কুরআনে এই বিষয়ে বলা হয়েছে:
“আমি শপথ করছি সেই নক্ষত্রের যা অদৃশ্য, যা চলমান এবং লুকিয়ে পড়ে।” (সূরা তাকভীর ৮১:১৫-১৬)
এটি ব্ল্যাক হোলের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে যায়, কারণ ব্ল্যাক হোল প্রচণ্ড মহাকর্ষের কারণে আলো শোষণ করে ফেলে।
৫. গ্রহ ও নক্ষত্রের গতি
কুরআন বলছে:
“তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৪০)
আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে, প্রতিটি গ্রহ ও নক্ষত্র নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান করে এবং ঘূর্ণায়মান থাকে।
উপসংহার
কুরআনে উল্লেখিত জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত এই তথ্যগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে চমৎকারভাবে মিলে যায়। কুরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এতে এমন বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে, যা প্রমাণ করে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। এটি পড়ার মাধ্যমে আমরা বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে গভীর সম্পর্ক উপলব্ধি করতে পারি।