ব্যবসার জন্য মাল্টি-চ্যানেল মার্কেটিং কৌশল
ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য পিভটিংয়ের গুরুত্ব
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির পরিবর্তন, গ্রাহকদের চাহিদা এবং বাজারের ওঠানামার কারণে অনেক কোম্পানিকে তাদের মূল কৌশল পরিবর্তন করতে হয়। এই কৌশলগত পরিবর্তনকেই বলা হয় পিভটিং (Pivoting)। সঠিক সময়ে পিভট করলে ব্যবসার টিকে থাকা এবং উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব।
![]() |
ব্যবসার জন্য মাল্টি-চ্যানেল মার্কেটিং কৌশল |
পিভটিং কী?
পিভটিং বলতে বোঝায় ব্যবসায়িক কৌশল বা মডেলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা, যা ব্যবসার প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এটি হতে পারে পণ্য পরিবর্তন, লক্ষ্য বাজারের পরিবর্তন, অথবা সম্পূর্ণ নতুন মডেলে স্থানান্তর। সফল কোম্পানিগুলো প্রায়ই পিভটিং করে তাদের টিকে থাকার পথ নিশ্চিত করে।
ব্যবসায়িক উন্নয়নে পিভটিংয়ের গুরুত্ব
১. বাজার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো
প্রতিনিয়ত বাজার পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই যে ব্যবসা পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না, তারা পিছিয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, নোকিয়া তাদের ব্যবসার পরিবর্তন করতে পারেনি, কিন্তু অ্যাপল নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেছে।
২. গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ
গ্রাহকদের চাহিদা এবং পছন্দের ধরন পরিবর্তিত হয়। সফল কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায়িক কৌশল গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে পরিবর্তন করে। নেটফ্লিক্স প্রথমে একটি ডিভিডি রেন্টাল কোম্পানি ছিল, কিন্তু পরে স্ট্রিমিং সার্ভিসে পিভট করে সফল হয়েছে।
৩. প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অনেক কোম্পানিকে তাদের কৌশল বদলাতে হয়। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ না করলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়।
৪. নতুন রাজস্ব উৎস তৈরি করা
একটি ব্যবসা পিভট করার মাধ্যমে নতুন রাজস্ব উৎস তৈরি করতে পারে। যেমন, অনেক ই-কমার্স কোম্পানি সাবস্ক্রিপশন মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে এবং নতুন উপার্জন পথ তৈরি করেছে।
৫. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন সুযোগ তৈরি করা
কোনো ব্যবসা যদি পূর্বের কৌশলে ব্যর্থ হয়, তবে তারা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে আবার উন্নতির পথে যেতে পারে। পিভটিং কোম্পানিগুলোকে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে এবং উন্নত কৌশল গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
কখন পিভট করা উচিত?
ব্যবসার সফলতার জন্য পিভটিং গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সবসময় এটি করা উচিত নয়। নিচের লক্ষণগুলো থাকলে পিভট করা যেতে পারে:
- বর্তমান ব্যবসায়িক মডেল লাভজনক হচ্ছে না।
- গ্রাহকদের চাহিদা পরিবর্তিত হয়েছে।
- প্রতিযোগিতার কারণে ব্যবসা পিছিয়ে পড়ছে।
- নতুন প্রযুক্তির কারণে পুরনো মডেল অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে।
- নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যা বেশি লাভজনক।
সফল পিভটিংয়ের উদাহরণ
১. ইনস্টাগ্রাম: প্রথমে এটি একটি চেক-ইন অ্যাপ ছিল (Burbn), কিন্তু পরে শুধুমাত্র ফটো-শেয়ারিং অ্যাপে পিভট করে বিশাল সাফল্য পায়। 2. স্যামসাং: এটি প্রথমে একটি মাছ ধরার ব্যবসা ছিল, কিন্তু পরে ইলেকট্রনিক্স খাতে পিভট করে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে। 3. পেপ্যাল: প্রথমে এটি পাম-পাইলটের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করত, পরে অনলাইন পেমেন্ট সেবায় পিভট করে জনপ্রিয়তা পায়।
কিভাবে সফলভাবে পিভট করবেন?
১. বাজার গবেষণা করুন
পিভট করার আগে বাজার গবেষণা করা জরুরি। গ্রাহক কী চায়, বর্তমান প্রবণতা কী, এসব বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
২. ছোট পরিসরে পরীক্ষা করুন
পিভটের আগে নতুন কৌশল বা পণ্য একটি ছোট পরিসরে পরীক্ষা করা উচিত। এতে ঝুঁকি কম থাকে এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া বোঝা যায়।
৩. গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া নিন
গ্রাহকদের মতামত বুঝে ব্যবসার পরিবর্তন করলে সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফিডব্যাকের ভিত্তিতে ব্যবসার নতুন দিক নির্ধারণ করা যেতে পারে।
৪. বর্তমান সম্পদ ও দক্ষতা ব্যবহার করুন
নতুন কিছু করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন ব্যবসায় নামার দরকার নেই, বিদ্যমান সম্পদ এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
৫. প্রতিযোগিতার ওপর নজর রাখুন
অন্য কোম্পানিগুলোর কৌশল বিশ্লেষণ করে নিজস্ব পিভট স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা বুদ্ধিমানের কাজ।
উপসংহার
ব্যবসার উন্নতির জন্য পিভটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। পরিবর্তনশীল বাজারে টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলোকে নিয়মিতভাবে তাদের কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনে নতুন পথ অবলম্বন করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই একটি ব্যবসা টিকে থাকতে পারে এবং উন্নতি করতে পারে।