হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা
হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা
হাশরের ময়দান হলো কিয়ামতের দিন যখন সমস্ত মানুষকে তাদের আমলের হিসাবের জন্য একত্রিত করা হবে। এটি এক ভয়াবহ ও মহা-বিচারের দিন, যেখানে কারও প্রতি সামান্যতম জুলুম হবে না, বরং প্রত্যেকেই তার কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল পাবে।
![]() |
হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা |
আল্লাহ তাআলা বলেন:
"সেদিন মানুষ দলে দলে বের হবে, যাতে তাদের আমল তাদের দেখানো হয়। অতঃপর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ সৎকর্ম করেছে, সে তা দেখতে পাবে, এবং যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করেছে, সেও তা দেখতে পাবে।"
📖 (সূরা যিলজাল: ৬-৮)
হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা
1️⃣ পৃথিবী ধ্বংস হবে এবং সবকিছু পাল্টে যাবে
কিয়ামতের আগে পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে, পাহাড়গুলো ধূলিকণায় পরিণত হবে, সমুদ্র জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মতো হয়ে উঠবে এবং আকাশ ফেটে যাবে।
2️⃣ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে
হাশরের ময়দানে প্রত্যেকেই তাদের কর্মফল নিয়ে শঙ্কিত থাকবে। পিতা-মাতা, সন্তান, স্ত্রী-স্বামী কেউ কাউকে চিনবে না, বরং সবাই নিজের চিন্তায় বিভোর থাকবে।
আল্লাহ বলেন:
"সেদিন এক ব্যক্তি তার ভাই, মা, বাবা, স্ত্রী এবং সন্তান থেকে পালাবে।"
📖 (সূরা আবাসা: ৩৪-৩৬)
3️⃣ সূর্য খুব নিকটে এসে যাবে
এক হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন সূর্য এত কাছাকাছি চলে আসবে যে মানুষের ঘাম তাদের গলায় পৌঁছে যাবে।
রাসুল (সা.) বলেন:
"হাশরের ময়দানে সূর্যকে মানুষের খুব নিকটে নিয়ে আসা হবে, ফলে মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামে নিমজ্জিত থাকবে।"
📖 (সহিহ মুসলিম: ২৮৬৪)
4️⃣ হিসাবের ভয়াবহতা
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে বলবেন। কেউ যদি ভালো কাজ করে, সে প্রতিদান পাবে, আর যদি খারাপ কাজ করে, তবে শাস্তি ভোগ করবে।
"সেদিন কোনো প্রাণী তার ন্যূনতম সৎকর্মও লুকাতে পারবে না এবং কেউ কারও বোঝা বহন করবে না।"
📖 (সূরা আনআম: ১৬৪)
5️⃣ নেক আমল ও বদ আমলের ওজন করা হবে
হাশরের ময়দানে প্রতিটি ভালো ও মন্দ কাজ ওজন করা হবে। যার সৎকর্মের পাল্লা ভারী হবে, সে জান্নাতের পথে চলবে, আর যার মন্দ কাজ বেশি হবে, সে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবে।
"যার নেক আমল ভারী হবে, সে সুখী হবে। আর যার মন্দ আমল ভারী হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া (জাহান্নাম)।"
📖 (সূরা কারিয়া: ৬-৯)
6️⃣ নবীজি (সা.)-এর সুপারিশ
কিয়ামতের দিন রাসুল (সা.) আল্লাহর অনুমতিতে উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন, যা অনেকের মুক্তির কারণ হবে।
হাশরের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির উপায়
✅ তাওবা ও ইস্তিগফার করা – নিয়মিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
✅ নামাজ কায়েম করা – নামাজ মানুষের আমলকে বিশুদ্ধ করে এবং শাস্তি থেকে রক্ষা করে।
✅ সৎ কাজ ও সদকা করা – দান-খয়রাত ও ভালো কাজের মাধ্যমে কিয়ামতের ভয়াবহতা কমানো সম্ভব।
✅ দ্বীন অনুযায়ী জীবনযাপন করা – ইসলামি শিক্ষার আলোকে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
উপসংহার
হাশরের ময়দান অত্যন্ত ভয়াবহ হবে, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার কর্মফল পাবে। এদিন কেউ কারও জন্য কিছু করতে পারবে না, কেবলমাত্র ঈমান, নেক আমল, রাসুল (সা.)-এর সুপারিশ এবং আল্লাহর অনুগ্রহই মুক্তির উপায়। আমাদের উচিত, আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং আল্লাহর রহমতের আশায় নেক আমল করা।