জাহান্নামের কঠিন শাস্তির বিবরণ
জাহান্নামের কঠিন শাস্তির বিবরণ
জাহান্নাম হলো চরম শাস্তির স্থান, যা আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসী, পাপী ও অন্যায়কারীদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কুরআন ও হাদিসে জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, যা মুমিনদের সতর্ক করে এবং আল্লাহর নাফরমানি থেকে বিরত থাকার অনুপ্রেরণা দেয়। আসুন, জাহান্নামের কঠিন শাস্তির কিছু বিবরণ জেনে নেই।
![]() |
জাহান্নামের কঠিন শাস্তির বিবরণ |
🔹 ১. জাহান্নামের আগুন পৃথিবীর আগুনের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি
📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তোমাদের এই আগুন, যা তোমরা দুনিয়াতে জ্বালাও, জাহান্নামের আগুনের তুলনায় ৭০ ভাগ কম উত্তপ্ত।”
(সহিহ বুখারি: ৩২৬৫, সহিহ মুসলিম: ২৮৪৩)
🔥 কীভাবে হবে সেই আগুন?
- সে আগুন মানুষের মাংস ও হাড় একসঙ্গে গলিয়ে ফেলবে।
- আগুন এত তীব্র হবে যে, তা কোনো কিছু অবশিষ্ট রাখবে না।
- সে আগুনের শিখা কালো হবে, যা দুনিয়ার আগুনের মতো লাল বা হলুদ হবে না।
🔹 ২. জাহান্নামের খাদ্য ও পানীয়
📖 আল্লাহ বলেন:
“জাহান্নামে তাদের কোনো খাদ্য নেই, শুধু দুর্গন্ধযুক্ত কাঁটা-গাছ (দারিয়) ও ফুটন্ত পানি।”
(সূরা গাশিয়াহ: ৬-৭)
💀 জাহান্নামের খাবার:
- যাক্কুম গাছ: জাহান্নামের বিশেষ গাছ, যা মানুষের পেটে আগুনের মতো জ্বলবে। (সূরা আস-সাফফাত: ৬২-৬৫)
- পুঁজ ও রক্ত: পাপীদের শরীর থেকে ঝরবে এবং সেটাই তাদের পান করতে হবে। (সূরা আল-ইনসান: ১৭)
🔥 জাহান্নামের পানীয়:
- হামিম: ফুটন্ত পানি, যা পান করলে মানুষের অন্ত্র কেটে বের হয়ে যাবে। (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)
- গিসলীন: পাপীদের শরীরের পুঁজ ও রক্ত দিয়ে তৈরি পানীয়। (সূরা আল-হাক্কাহ: ৩৬-৩৭)
🔹 ৩. জাহান্নামের পাহাড় সমান আগুনের শাস্তি
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“জাহান্নামে একটি পাথর ফেলা হলে ৭০ বছর পর্যন্ত তা নিচে পড়ে, তবুও তা তলানিতে পৌঁছায় না।”
(তিরমিজি: ২৫৭৭)
🔥 কী হবে এই আগুনে?
- পাপীদের শরীরকে বিশাল আগুনের মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে।
- আগুনের শিখা তাদের ঘিরে রাখবে এবং বারবার পোড়াবে।
- শাস্তি এত ভয়ংকর হবে যে, তারা চাইবে ধ্বংস হয়ে যাক, কিন্তু তাও হবে না। (সূরা আন-নিসা: ৫৬)
🔹 ৪. জাহান্নামের আগুনে পোড়ানোর ধরন
📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“জাহান্নামে সবচেয়ে হালকা শাস্তি পাবে যে ব্যক্তি, তার দুই পায়ের নিচে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে, যার তাপে তার মস্তিষ্ক ফুটতে থাকবে।”
(সহিহ বুখারি: ৬৫৬২, সহিহ মুসলিম: ২১৩)
🔥 কীভাবে শাস্তি দেওয়া হবে?
- দুনিয়ার পাপ অনুযায়ী জাহান্নামের আগুনে পোড়ানো হবে।
- দেহের প্রতিটি অঙ্গ একবার পুড়লে নতুন করে তৈরি করা হবে, যেন শাস্তি অব্যাহত থাকে। (সূরা আন-নিসা: ৫৬)
- পাপীদের চেহারা আগুনে পোড়ানো হবে এবং তাদের চামড়া বারবার পরিবর্তন করা হবে। (সূরা আন-নিসা: ৫৬)
🔹 ৫. জাহান্নামের গভীরতা ও দরজা
📖 আল্লাহ বলেন:
“জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে, এবং প্রত্যেক দরজা নির্দিষ্ট লোকদের জন্য নির্ধারিত।”
(সূরা আল-হিজর: ৪৪)
🚪 কীভাবে হবে সেই দরজাগুলো?
- প্রত্যেক দরজা দিয়ে আলাদা আলাদা অপরাধীদের প্রবেশ করানো হবে।
- দরজাগুলো এত বিশাল যে, সেগুলো পাপীদের গিলে খাবে।
🔹 ৬. জাহান্নামের শৃঙ্খল ও শিকল
📖 আল্লাহ বলেন:
“তাদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হবে এবং আগুনে টেনে নেওয়া হবে। তারপর তাদের বিশাল শিকলে বেঁধে ফেলা হবে।”
(সূরা আল-হাক্কাহ: ৩০-৩২)
🔗 এই শিকল কেমন হবে?
- শিকলের দৈর্ঘ্য ৭০ গজ হবে। (সূরা আল-হাক্কাহ: ৩২)
- পাপীদের হাত, পা ও গলা একসঙ্গে বাঁধা হবে।
🔹 ৭. জাহান্নামের অভ্যন্তরীণ ভয়াবহতা
📖 আল্লাহ বলেন:
“তাদের জন্য আছে এক বিশাল আগুন, যা তাদের ঘিরে রাখবে এবং তাদের উপরে শিখা বর্ষিত হবে।”
(সূরা আল-কাহফ: ২৯)
🔥 ভয়াবহতা:
- আগুনের শিখা আকাশ পর্যন্ত উঠে যাবে।
- যন্ত্রণায় পাপীরা চিৎকার করবে, কিন্তু কেউ তাদের সাহায্য করবে না।
- তারা বারবার প্রার্থনা করবে, কিন্তু তাদের প্রার্থনা কবুল হবে না। (সূরা ফাতির: ৩৭)
🔹 ৮. জাহান্নামে চিরকাল বসবাস
📖 আল্লাহ বলেন:
“যারা কুফরি করেছে, তারা জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে। তাদের শাস্তি কখনো লাঘব হবে না।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৬২)
⏳ চিরকালীন শাস্তি:
- কাফেররা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।
- তাদের জন্য কোনো মুক্তি নেই।
🔹 ৯. জাহান্নামের কষ্ট ও পাপীদের চিৎকার
📖 আল্লাহ বলেন:
“তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের এখান থেকে বের করে দাও, আমরা ভালো কাজ করব। কিন্তু উত্তর আসবে, ‘এটাই তোমাদের শেষ পরিণতি।’”
(সূরা আল-মু’মিনুন: ১০৭-১০৮)
😢 পাপীদের আকুতি:
- তারা বলবে, "হে আল্লাহ! আমাদের দ্বিতীয় সুযোগ দাও!"
- কিন্তু তাদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
🔹 উপসংহার
জাহান্নামের শাস্তি এত ভয়ানক যে, কোনো মানুষ যেন কখনো সেখানে না যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। আমিন! 🤲
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সে কখনো জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে না।”
(তিরমিজি: ১৬৩৩)
🌿 হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের জান্নাত দান করুন! আমিন! 🤲