দাজ্জালের ফিতনা ও তার থেকে বাঁচার উপায়
দাজ্জালের ফিতনা ও তার থেকে বাঁচার উপায়
দাজ্জাল কিয়ামতের অন্যতম বড় ফিতনা। এটি এত ভয়াবহ হবে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আদম সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত দাজ্জালের চেয়ে বড় কোনো ফিতনা হয়নি।” (সহিহ মুসলিম: ২৯৪৬)
দাজ্জাল নিজেকে ঈশ্বর দাবি করবে, বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করবে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তাই মুসলমানদের জন্য এটি এক কঠিন পরীক্ষা।
![]() |
দাজ্জালের ফিতনা ও তার থেকে বাঁচার উপায় |
🔹 দাজ্জালের পরিচয়
🔸 দাজ্জাল একটি বিশেষ ব্যক্তি, যে আখিরাতে আগমনের পূর্ব লক্ষণ।
🔸 তার এক চোখ থাকবে অন্ধ, আর কপালে "কাফের" (ك ف ر) লেখা থাকবে, যা মুমিনরা পড়তে পারবে।
🔸 সে ৪০ দিন পৃথিবীতে অবস্থান করবে—
- প্রথম দিন এক বছরের সমান হবে,
- দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান,
- তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান,
- বাকি দিনগুলো সাধারণ দিনের মতো হবে।
🔸 সে বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে।
🔸 জান্নাত-জাহান্নামের প্রতিরূপ সৃষ্টি করবে— - তার জান্নাত আসলে জাহান্নাম,
- তার জাহান্নাম আসলে জান্নাত।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“তার সাথে থাকবে জান্নাত ও জাহান্নামের মতো কিছু। কিন্তু আসলে সেটাই হবে জাহান্নাম ও জান্নাত।" (সহিহ মুসলিম: ২৯৩৪)
🔹 দাজ্জালের সবচেয়ে ভয়ংকর ফিতনা
🔸 সে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ঈমান নষ্ট করবে।
🔸 তার কাছে প্রচুর খাবার ও সম্পদ থাকবে, তাই মানুষ লোভে পড়ে তার অনুসরণ করবে।
🔸 সে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার মতো অলৌকিক ক্ষমতা দেখাবে, যা মানুষকে ধোঁকায় ফেলবে।
🔸 অনেক মুসলিমও তার ফিতনায় পড়ে বিভ্রান্ত হবে।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে, সে বড় সফলতা লাভ করবে।” (সহিহ মুসলিম: ২৯৩৬)
🔹 দাজ্জালের আবির্ভাবের স্থান
🔸 দাজ্জাল পূর্ব দিক থেকে বের হবে।
🔸 রাসুল (সা.) বলেছেন:
“সে খোরাসানের এক জায়গা থেকে বের হবে, তার সঙ্গে ৭০ হাজার ইহুদি থাকবে।” (তিরমিজি: ২২৩৭)
🔸 সে দুনিয়ার প্রায় সব জায়গায় ভ্রমণ করবে, তবে মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না, কারণ সেখানে ফেরেশতারা পাহারা দেবে।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“দাজ্জাল মদিনায় ঢুকতে পারবে না, কারণ ফেরেশতারা পাহারা দেবে।” (সহিহ বুখারি: ১৮৮১)
🔹 দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়
✅ ১. সূরা কাহাফের প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত মুখস্থ করা
- এটি দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯)
✅ ২. মক্কা ও মদিনায় অবস্থান করা
- দাজ্জাল সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না।
✅ ৩. ঈমান ও তাওহিদ শক্তিশালী করা
- যারা প্রকৃত ঈমানদার, তারা দাজ্জালের ধোঁকায় পড়বে না।
✅ ৪. দাজ্জাল আসলে তার থেকে দূরে থাকা
- দাজ্জালের সাথে যুক্ত হওয়া মানেই তার ফিতনায় পড়া।
✅ ৫. আল্লাহর কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়া
- রাসুল (সা.) আমাদের তাশাহহুদ শেষে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া পড়তে বলেছেন—
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন ‘আযাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ‘আযাবিল কবর, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল।”
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের শাস্তি, কবরের শাস্তি, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা এবং মসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।” (সহিহ মুসলিম: ৫৮৮)
🔹 দাজ্জালের মৃত্যু
🔸 দাজ্জাল দুনিয়ায় ৪০ দিন অবস্থান করবে, এরপর ইসা (আ.) নেমে তাকে হত্যা করবেন।
🔸 হাদিসে এসেছে, ইসা (আ.) দাজ্জালকে লোদ নামক স্থানে বধ করবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭)
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
"এরপর ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন, এবং ইসলাম বিজয়ী হবে।" (তিরমিজি: ২২৩৬)
🔹 উপসংহার
🔸 দাজ্জাল কিয়ামতের সবচেয়ে ভয়ংকর ফিতনা।
🔸 সে ধোঁকা, অলৌকিক ক্ষমতা ও প্রলোভনের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে।
🔸 তার ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ঈমান শক্তিশালী করতে হবে, দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে এবং সূরা কাহাফের আয়াত মুখস্থ করতে হবে।
🔸 অবশেষে, ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।
📖 আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাজত করুন! আমিন! 🤲