কিয়ামতের দিন কারা নিরাপদ থাকবে?

কিয়ামতের দিন কারা নিরাপদ থাকবে?

কিয়ামতের দিন হবে ভয়াবহ এক মুহূর্ত, যেখানে সবাই আতঙ্কিত থাকবে। কিন্তু কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানা যায়, কিছু মানুষ সে দিনে আল্লাহর রহমতে নিরাপদ থাকবে। কারা তারা?

কিয়ামতের দিন কারা নিরাপদ থাকবে?


🔹 ১. তাকওয়াবান ও মুত্তাকি ব্যক্তিরা

📖 আল্লাহ বলেন:
“যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ করে দেন।” (সূরা আত-তালাক: ২)

✅ যারা দুনিয়ায় আল্লাহকে ভয় করে ন্যায় ও সত্য পথে চলেছে, তারা কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ থাকবে।


🔹 ২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারীরা

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো পড়ে, কিয়ামতের দিনে সে নিরাপদ থাকবে। আর যারা নামাজের অবহেলা করবে, তাদের জন্য কোনো নিরাপত্তা থাকবে না।” (মুসনাদ আহমাদ: ৩৯৪৫)

✅ যারা নামাজকে গুরুত্ব দেয়, তারা কিয়ামতের কঠিন পরীক্ষায় সফল হবে।


🔹 ৩. ন্যায়পরায়ণ নেতা ও শাসকগণ

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“সাত শ্রেণির মানুষ কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে, তাদের মধ্যে প্রথমজন হল ন্যায়পরায়ণ শাসক।” (সহিহ বুখারি: ৬৬০, সহিহ মুসলিম: ১০৩১)

✅ যারা অন্যায়ের পরিবর্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা আল্লাহর বিশেষ রহমত পাবে।


🔹 ৪. আল্লাহর ঘরে বেড়ে ওঠা নেককার যুবক

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“সাত শ্রেণির মধ্যে একজন হল সেই যুবক, যে তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে।” (সহিহ বুখারি: ৬৬০)

✅ যারা যৌবনকালকে ইবাদতে ব্যয় করেছে, তারা কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাবে।


🔹 ৫. দানশীল ব্যক্তি, যে গোপনে দান করে

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করছে, বাম হাতও তা জানতে পারে না, সে আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।” (সহিহ বুখারি: ৬৬০, সহিহ মুসলিম: ১০৩১)

✅ গোপনে দান করা মানুষের জন্য কিয়ামতের দিন বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।


🔹 ৬. আল্লাহর পথে একে অপরকে ভালোবাসা

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে দুই ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং সেই ভালোবাসায় মিলিত হয় ও বিদায় নেয়, তারা আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।” (সহিহ বুখারি: ৬৬০, সহিহ মুসলিম: ১০৩১)

✅ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও দ্বীনি বন্ধুত্ব কিয়ামতের দিনে নিরাপত্তা দেবে।


🔹 ৭. হারাম থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা ব্যক্তি

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি একা থাকা অবস্থায় গুনাহ করতে পারত, কিন্তু সে কেবল আল্লাহর ভয়েই তা থেকে বিরত থাকে, সে আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।” (সহিহ বুখারি: ৬৬০, সহিহ মুসলিম: ১০৩১)

✅ গুনাহ থেকে দূরে থাকা কিয়ামতের কঠিন দিনে আশ্রয়ের কারণ হবে।


🔹 ৮. ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যবসায়ী সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে লেনদেন করে, কিয়ামতের দিন সে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।” (তিরমিজি: ১২০৯)

✅ যারা সুদ, প্রতারণা ও অন্যায় বর্জন করে হালাল উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করেছে, তারা নিরাপদ থাকবে।


🔹 ৯. কুরআন তিলাওয়াতকারী ও এর ওপর আমলকারী

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“কিয়ামতের দিন কুরআন সুপারিশ করবে।” (সহিহ মুসলিম: ৮০৪)

✅ যারা কুরআন পড়ে এবং তার ওপর আমল করে, তারা কিয়ামতের দিন কুরআনের সুপারিশে মুক্তি পাবে।


🔹 ১০. আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী ব্যক্তি

📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে, সে কিয়ামতের দিন নিরাপদ থাকবে।” (তিরমিজি: ৩৩৭৭)

✅ জিকির ও দোয়া যারা বেশি বেশি করে, তারা কিয়ামতের ভীতি থেকে মুক্তি পাবে।


🔹 উপসংহার

কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে নিরাপদ থাকতে হলে আমাদের উচিত:
✅ আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখা
✅ নিয়মিত নামাজ পড়া
✅ ন্যায়বিচার করা
✅ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
✅ কুরআন তিলাওয়াত করা
✅ বেশি বেশি দান-সদকা করা
✅ দোয়া ও জিকিরে অভ্যস্ত হওয়া

📖 আল্লাহ আমাদের সবাইকে কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন! আমিন! 🤲

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩