জান্নাতের ৮টি দরজা ও তাদের বৈশিষ্ট্য
জান্নাতের ৮টি দরজা ও তাদের বৈশিষ্ট্য
জান্নাত হলো চিরস্থায়ী শান্তির স্থান, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর নেককার বান্দাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। জান্নাতে প্রবেশের জন্য ৮টি বিশেষ দরজা রয়েছে, আর প্রত্যেক দরজা নির্দিষ্ট আমলকারীদের জন্য নির্ধারিত। আসুন জেনে নিই জান্নাতের এই ৮টি দরজা ও তাদের বৈশিষ্ট্য।
![]() |
জান্নাতের ৮টি দরজা ও তাদের বৈশিষ্ট্য |
🔹 ১. باب الصلاة (বাবুস সালাহ) – নামাজ আদায়কারীদের জন্য
যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়ে এবং সালাতের প্রতি যত্নশীল, তারা এই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি যত্নশীল, কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের باب الصلاة (নামাজের দরজা) দিয়ে প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৭, সহিহ মুসলিম: ১০২৭)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে
- যারা সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করে
🔹 ২. باب الجهاد (বাবুল জিহাদ) – আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য
যারা আল্লাহর পথে লড়াই করেছে, তাদের জন্য রয়েছে باب الجهاد (জিহাদের দরজা)।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, সে باب الجهاد দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৭, সহিহ মুসলিম: ১০২৭)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা ইসলামের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে
- যারা ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে
🔹 ৩. باب الريان (বাবুর রাইয়ান) – রোজাদারদের জন্য
যারা নিয়মিত রোজা রাখে, বিশেষত রমজানের রোজা, তাদের জন্য باب الريان নামে জান্নাতের একটি বিশেষ দরজা রয়েছে।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“জান্নাতে باب الريان নামে একটি দরজা আছে, যা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম: ১১৫২)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা রমজানের রোজা রাখে
- যারা নফল রোজা রাখে (যেমন সোম ও বৃহস্পতিবার, আশুরা, আরাফার রোজা)
🔹 ৪. باب الصدقة (বাবুস সাদাকাহ) – দানশীলদের জন্য
যারা আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করে, তাদের জন্য باب الصدقة নামে দরজা রয়েছে।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি বেশি দান করে, সে باب الصدقة (দানশীলদের দরজা) দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৭, সহিহ মুসলিম: ১০২৭)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে
- যারা মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিম ও গরিবদের সাহায্য করে
🔹 ৫. باب الحج (বাবুল হাজ্জ) – হজ পালনকারীদের জন্য
যারা শুদ্ধ নিয়তে হজ ও ওমরাহ পালন করেছে, তাদের জন্য باب الحج (হজের দরজা) রয়েছে।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“শুদ্ধ নিয়তে হজ করলে, সে জান্নাতে বিশেষ দরজা باب الحج দিয়ে প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারি: ১৫২১, সহিহ মুসলিম: ১৩৫০)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা হজ ও ওমরাহ করেছে
- যারা হজের শর্ত মেনে পালন করেছে
🔹 ৬. باب الكاظمين الغيظ (বাবুল কাযিমিনাল গাইয) – রাগ সংবরণকারীদের জন্য
যারা রাগ সংবরণ করে এবং অন্যদের ক্ষমা করে, তাদের জন্য باب الكاظمين الغيظ নামে জান্নাতের দরজা রয়েছে।
📖 আল্লাহ বলেন:
“যারা রাগ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৪)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা ধৈর্যশীল
- যারা অন্যদের ক্ষমা করে
🔹 ৭. باب الذكر (বাবুজ জিকর) – আল্লাহকে অধিক স্মরণকারীদের জন্য
যারা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে (যেমন জিকির, দোয়া ও তাসবিহ পড়ে), তাদের জন্য باب الذكر নামে দরজা রয়েছে।
📖 আল্লাহ বলেন:
“যারা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তারা সফল হবে।” (সূরা আহযাব: ৩৫)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা নিয়মিত জিকির ও দোয়া করে
- যারা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে
🔹 ৮. باب التوبة (বাবুত তাওবা) – তওবা কারীদের জন্য
যারা খাঁটি মনে আল্লাহর কাছে তওবা করেছে এবং গুনাহ থেকে ফিরে এসেছে, তাদের জন্য باب التوبة নামে দরজা রয়েছে।
📖 রাসুল (সা.) বলেন:
“আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।” (তিরমিজি: ৩৫৪০)
✅ এই দরজা কাদের জন্য?
- যারা খাঁটি মনে তওবা করে
- যারা গুনাহ থেকে ফিরে আসে
🔹 উপসংহার
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জান্নাতের এই ৮টি দরজার যেকোনো একটি (বা একাধিক) দিয়ে প্রবেশের তওফিক দিন। এজন্য আমাদের নিয়মিত সালাত, রোজা, দান-সদকা, জিহাদ, হজ, জিকির ও তওবা করা উচিত।
📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি তার জীবনে সব ভালো আমল করবে, সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশের অনুমতি পাবে।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৭, সহিহ মুসলিম: ১০২৭)
🌿 আল্লাহ আমাদের সবাইকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন! আমিন! 🤲